আবির দত্ত, কলকাতা : একুশ শতকের শহর কলকাতা। প্রতি মুহূর্তে প্রযুক্তিগত ভাবে আমরা কতটা এগিয়ে গিয়েছি, তা নিয়ে আত্মশ্লাঘা অনুভব করি। তার মধ্যেই প্রকাশ্যে এল শিউরে ওঠার মতো এক ঘটনা। নারকেলডাঙায় এক গৃহবধূর রহস্যমৃত্যু হয়েছে। শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। ঘর থেকে ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে মৃতার বাপের বাড়ির সদস্যদের অভিযোগ তাঁদের মেয়েকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কেন? মৃতার বাপের বাড়ির লোকেদের বিস্ফোরক অভিযোগ পরপর ২ বার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। আর সেই রোষেই তাঁদের মেয়েকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, অত্যাচার চলছে অনেকদিন ধরেই। এমনকি মৃতার স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কও রয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন মৃতার বাপের বাড়ির সদস্যরা। আর তা নিয়ে প্রতিবাদ করাতেও তাঁদের মেয়েকে অত্যাচার সইতে হয়েছে। এই নিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। আরও অভিযোগ, মৃতা ২ বার কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় তাঁর স্বামী, প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার কথাও ভেবে ফেলেছিলেন। এতে সায় ছিল ছেলের বাড়ির বাকি লোকেদেরও। পুলিশের তরফে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। 

মারা যাওয়ার মিনিট ১৫-২০ আগেও বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল নারকেলডাঙার গৃহবধূ শ্বেতাপ্রসাদ সাউয়ের 

মৃতার বাবা জানিয়েছেন, ১১টা ৫৬ মিনিট থেকে ১২টা ২-৩ মিনিট পর্যন্ত মেয়ের সঙ্গে কথা ফোনে কথা হয়েছিল তাঁর। মৃতার বাবা গিয়েছিলেন মেয়ের বাড়ি। তখন মেয়ের শ্বশুর জানান যে, 'ঘরে ওরা মারপিট করেছে। সব লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। একটু পরে যাবেন। এখানে অফিসে বসুন।' এরপর মেয়ের শ্বশুরের ওই অফিস ঘরে বসেই শ্বেতাকে আবারও ফোন করেন তাঁর বাবা। মৃতার বাবার অভিযোগ, তাঁর জামাইয়ের স্বভাব মোটেই ভাল ছিল না। এলাকার লোকেও তা জানত। অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতেন শ্বেতার স্বামী। এই নিয়ে অশান্তিও হতো সংসারে। শ্বেতা অনেকবার বলেও স্বামীকে শুধরাতে পারেননি। মৃতার বাবা আরও জানিয়েছেন, মেয়ের উপর অত্যাচার চালাত স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। এর অন্যতম কারণ ২ বার পর পর কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়া। বাপের বাড়ি থেকেই বরং বলা হতো মানিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মেয়ের এ হেন পরিণতিতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শ্বেতার বাবা। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। এখন শুধুই সুবিচার চাইছেন।