পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা: চারিদিকে পুজো পুজো গন্ধ। মণ্ডপে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড়। ক্রমেই উন্নত হচ্ছে আবহাওয়া, আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মণ্ডপে বাড়ছে ভিড়। তবে ছবিটা যেন বদলেও বদলাচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে কিন্তু থামেনি মৃত্যুমিছিল। তুমুল বৃষ্টির পর চারদিন কেটে গিয়েছে। তবে আজ ফের একবার জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ঘটল।

Continues below advertisement

ঘটনাটি বেহালার সরশুনার ক্ষুদিরাম পল্লির। আজ বেহালায় শ্রাবন্তী দেবী নামক এক প্রৌঢ়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি বন্ধ থাকা দোকানের শাটার খুলতে গিয়েই মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ওই এলাকায় বৃষ্টি কমলেও, চারদিন ধরে জল জমেই আছে। জমা জলের মধ্যে দোকান খুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মহিলা, দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। এখানেই কিন্তু শেষ নয়। প্রৌঢ়া একা নন, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আরও দুইজন স্থানীয় বাসিন্দাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন! 

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর পর সরশুনা জুড়ে আতঙ্ক। জমা জলে হাঁটতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা। গোটা এলাকায় কোনও নিকাশি ব্যবস্থা নেই। 'বর্ষাকালের শুরু থেকেই জল জমে আছে এলাকায়। স্থানীয় কাউন্সিলরকে বলে কোনও সুরাহা হচ্ছে না', অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

Continues below advertisement

একইদিনে দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে আরও এক মৃত্যুও হয়েছে। সোনারপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক পুজো উদ্যোক্তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। মৃতের নাম বিশ্বজিৎ সাহা। সুভাষগ্রামে কোদালিয়া শান্তি সংঘ ক্লাবের পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। দুর্ভাগ্যবশত প্যান্ডেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কিন্তু CESC কর্তৃপক্ষকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন। মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ বা চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিকভাবে CESC দায় এড়িয়ে গেলেও শেষমেশ কিন্তু ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হল তারা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের দিন দু'য়েক পরে, বৃহস্পতিবার CESC-র তরফে ঘোষণা করা হল, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যারা মারা গিয়েছেন, প্রতিটি পরিবারের হাতে ৫ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।

CESC -র ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনীত সিক্কা বলেছেন, 'কলকাতায় অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য আমরা মর্মাহত। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়ে এবং মানবিক দিক থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।' অপরদিকে, মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য় ও পরিবারের ১ জনকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্য মন্ত্রী। কিন্তু, স্বজনহারা পরিবারের সাফ কথা, তাঁদের যে ক্ষতি হয়ে গেল, তা কখনওই অর্থ সাহায্য় কিংবা চাকরি দিয়ে পূরণ করা যেতে পারে না!