কলকাতা: ছুটির আর্জি খারিজ হওয়া এবং ডিউটি ভাগ হওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা শোনা গিয়েছে আগেই। ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের উপরই নাকি রাগ ছিল পার্ক স্ট্রিট শ্যুটআউটে (Park Street Shootout) অভিযুক্ত ঘাতকের, সূত্র মারফত অন্তত তেমনই জানা যাচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে (Kolkata Police), সুবীর ঘোষ নামে CISF-এর অ্যাসিন্ট্যান্ট কমান্ডান্ট সুবীর ঘোষই আসলে ঘাতক হেড কনস্টেবল অক্ষয় কুমার মিশ্রের নিশানায় ছিলেন। সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সময় নানা ভাবে ঘাতকের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন সুবীর। সহকর্মীরাও তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন বলে অভিযোগ সামনে আসছে। তার জেরে মানসিক চাপ থেকেই ঘাতক এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে সূত্র মারফত উঠে এসেছে। যদিও কেন এলোপাথাড়ি গুলি চালালেন ঘাতক, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ এবং সিআইএসএফ।
ঠিক কী কারণে এমন কাণ্ড ঘটালেন অভিযুক্ত!
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সন্ধে সওয়া ৬টা নাগাদ রোল কলের সময় সেন্ট্রি এস কে মূর্তির কাছ থেকে AK-47 ছিনিয়ে নেন CISF-এর হেড কনস্টেবল অক্ষয়। প্রথমে অ্যাসিন্ট্যান্ট কমান্ডান্ট সুবীরকে লক্ষ্য করেই গুলি চালান তিনি। তাঁর কব্জি ছুঁয়ে গুলি বেরিয়ে যায়। গুলি লাগে ASI রঞ্জিত কুমার সারেঙ্গির। পর পর গুলির শব্দে মুহূর্তের মধ্যে হইচই পড়ে যায় এলাকায়। এদিক ওদিক দৌড়ে পালাতে থাকেন সকলে। এমনকি গুলিবিদ্ধ সারেঙ্গিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ও গুলি চালান অক্ষয়।
খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে কলকাতা পুলিশ এবং বিপর্যয়য় মোকাবিলা বাহিনী। আসেন কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল নিজে। ঘিরে ফেলা হয় গোটা এলাকা। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হেলমেট, কাঁদানে গ্যাস, মাইক নিয়ে এগোতে থাকে সশস্ত্র বাহিনী। প্রায় দেড় ঘণ্টার টানটান উত্তেজনা চলার পর, রাত ৮টা নাগাদ অক্ষয়কে অভিযুক্তকে ধরে ফেলে পুলিশ।
পুলিশের তরফে প্রথমে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় অক্ষয়কে। তার পাল্টা কথা বলতে চেয়ে অস্ত্র ফেলে পুলিশকে ভিতরে ঢুকতে বলেন তিনি। সেই নিয়ে চলে স্নায়ুযুদ্ধ। তার পর অস্ত্র রেখেই ভিতরে ঢোকেন পুলিশের কয়েক জন। ভিতরে ঢোকেন ডিসি সেন্ট্রাল রুপেশ কুমার। বাইরে তখন প্রস্তুত ব্যাকআপ বাহিনী। তবে কাউন্সেলিং করে শেষমেশ অক্ষয়কে নিরস্ত্র করে বার করে আনা সম্ভব হয়।
প্রায় ১৫ রাউন্ড গুলি চলে বলে জানিয়েছেন কমিশনার গোয়েল
এর পর গ্রেফতার করে অভিযুক্ত অক্ষয় কুমার মিশ্রকে নিউমার্কেট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে চাপিয়ে বার করে নিয়ে যাওয়ার সময় নির্লিপ্তই দেখায় অক্ষয়কে। এমনকি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা দেখে হাতও নাড়েন তিনি। কলকাত পুলিশের কমিশনার গোয়েল জানিয়েছেন, কমপক্ষে ১৫ রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন অক্ষয়। কেন তিনি এমন কাণ্ড ঘটালেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।