কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: তুলে নেওয়া হয়েছে কর্মী। উপাচার্যকে চা দিচ্ছেন তাঁর গাড়ির চালক। বেনজির ছবি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্যর বিস্ফোরক অভিযোগ, কাজের পরিস্থিতি নেই। মত জানিয়েছি, সরকার সিদ্ধান্ত নিক। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য কার্যত উপাচার্যের পাশেই দাঁড়িয়েছেন


বুধবারই তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দফতরের কর্মী তুলে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দেখা গেল বেনজির ছবি। কর্মী না থাকায় উপাচার্যকে চা দিচ্ছেন, তাঁর নিজের গাড়ির চালক!


তিন মাস আগেও, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। কিন্তু, বুধবার তিনি দাবি করেন, সমস্যা কমার বদলে বেড়েছে। সেই সঙ্গে উপাচার্য ফের নিশানা করেন তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনকে। ২৪ ঘণ্টা পরও সেই অবস্থানে অনড় তিনি।


ঠিক উপাচার্যর ঘরের পাশেই। তারা উপাচার্যর অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ঘুরিয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপির সখ্যের ইঙ্গিত করেছে। সরকার ও দলকে বদবাম করার চেষ্টা। বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিচ্ছে না মন্তব্য ইউনিট প্রেসিডেন্টের। 


এরই মধ্যে এদিন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য উপাচার্যর পাশেই দাঁড়িয়েছেন।শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কথায়, টুকটাক সমস্যা হয়। একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় সবার। সেকানে উপাচার্যের মতই চূড়ান্ত। চায়ের বিষয়ে হয়তো বাড়ির চা খেতে পছন্দ করে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মী নেই বলে, অধ্যাপক ও আধিকারিকরা নিজেই ফাইল নিয়ে উপাচার্যর ঘরে আসছেন। 


তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার। ফের বিস্ফোরক রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (Rabindra Bharati University VC)। "এভাবে কাজ করা কঠিন, সম্মতি ছাড়াই দফতরের কর্মীদের তুলে নেওয়া হয়েছে", শাসক দলের অনুগামী কর্মী-সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর (Sabyasachi Basu Roychowdhury)। 


"এভাবে কাজ করা কঠিন"-


তিনি বলেন, "রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে দু'বার চিঠি দিয়েছিলাম। পরবর্তী পর্যায়ে ২২ শ্রাবণ যখন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্র-প্রয়াণের অনুষ্ঠান হয়, শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং এসে আশ্বাস দিয়েছিলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। কাজ করতে কোনও অসুবিধা হবে না। কালীপুজোর আগেই দেখি, আমার দফতরে যে কর্মীরা ছিলেন, তাঁদের তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর অন্য আর একদল কর্মীকে সেখানে পাঠানো হয়। সেটা প্রশাসনিক স্তরে হয়নি। রেজিস্টারও জানিয়েছেন, কর্মীদের স্থানান্তরিত করার ব্যাপারে উনি কোনও নির্দেশ দেননি। আজ সকালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই, তখন আমার অর্থাৎ উপাচার্যের দফতর সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। সেটাকে খোলার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর সেখানে কাজ করার চেষ্টা করি। এভাবে কাজ করা কঠিন। যাঁরা বাধা দিচ্ছেন, তাঁরা শাসকদলের অনুগামী বলে পরিচয় দেন।" 


টানা ১০ বছর ধরে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর দায়িত্ব পালন করছেন সব্যসাচীবাবু। সম্প্রতি তিনি বলেন ‘‘গত কয়েক মাস ধরেই দেখতে পাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র এবং কিছু শিক্ষাকর্মী চত্বরে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছেন, যেখানে বিভিন্ন সময় শিক্ষক, আধিকারিক এবং উপাচার্যের দফতরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। সবসময় যে বিক্ষোভের কারণগুলি সঙ্গত, এমনও নয়। গত ১৮ জুলাই ছাত্রদের বক্তব্য ছিল, লাইব্রেরিতে বই নেই। আমি বলি, না থাকলে তালিকা তৈরি করে লিখিত জমা দিতে। বই নিশ্চিত ভাবেই আছে, পত্রপত্রিকাও আছে। তা-ও নির্দিষ্ট কোনও বই লাগলে, লিখিতভাবে জানালে, তা সমাধানের চেষ্টা করব। আর্থিক সঙ্কট থাকলেও বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অগ্রাধিকার পাবে।’’