কলকাতা: পাঁচ ঘণ্টার প্রবল বর্ষণ, আর তাতেই জল থইথই চারিদিক। ব্যাহত মেট্রো, বাস, ট্রেন পরিষেবা। এরই মাঝে শহর ও রাজ্যে একের পর এক প্রাণহানি হয়েই চলেছে। সোমবারের রাতের রেকর্ড বৃষ্টি যেন মৃত্যুদূত হয়ে আছড়ে পড়ল উৎসবমুখী রাজ্যে! কেউ পেটের দায়ে পথে বেরিয়ে বিদ্য়ুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন। কেউ আবার কাজ করতে গিয়ে ঢলে পড়লেন মৃত্যুর কোলে। এবারে জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত আরও এক। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১, কলকাতায় প্রাণ হারিয়েছেন আটজন।
রাত আটটার আশেপাশে নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার ফট্টাবাদে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী পুকুরের পাশে ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছিপ ফেলে মাছ ধরার সময়ই কোনও এক খোলা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। গোটা জায়গাটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে এবং বিদ্যুৎ দফতরকেও খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হচ্ছে।
এদিন দুর্যোগ মাথায় নিয়ে পথে বেরিয়েছিলেন পেশায় ফল ব্যবসায়ী প্রাণতোষ কুণ্ডু। নেতাজিনগর মোড়েই ফুটপাতের ধারে তাঁর ফলের দোকান। সকালে দোকানের কাছে পৌঁছে বাতিস্তম্ভের গায়ে সাইকেল হেলান দিয়ে রাখতে যান বাষট্টি বছরের এই ফল ব্যবসায়ী। মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তিনি। অভিষিক্তা মোড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এক সাইকেল আরোহীর। মৃত রামগোপাল পণ্ডিত গড়ফার বাসিন্দা। কলকাতা পুরসভার হরিদেবপুরে জলমগ্ন কারখানায় জেনারেটর সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক কর্মীর!
কারখানায় কাজ করতে গিয়ে খোলা তারের বলি বেহালাতেও। প্লাস্টিকের সরঞ্জাম তৈরির কারখানায় কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান সুনীল সূর্য নামে এক ব্য়ক্তি! জমা জলে পড়ে থাকা খোলা তারে হাত দিতেই ঘটে যায় অঘটন। দাদুর শ্রাদ্ধে সাব মার্সিবল পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ করতে গিয়ে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হয় নাতির। মিন্টো পার্কে হোটেলে ইনভার্টার অফ করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান মগরাহাটের বাসিন্দা পবন ঘরামি। মঙ্গলবার সন্ধেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরে বিদ্য়ুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্য়ু হয় বছর ৩৫-এর এক ব্য়ক্তির।
এছাড়া কলকাতার পাশাপাশি দুর্যোগে জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। দুর্যোগে খোলা তারের বলি জেলাতেও। নর্দমা পরিষ্কার করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় উত্তর ২৪ পরগনার শাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের এক অস্থায়ী কর্মীর। অর্থাৎ জেলা থেকে শহরতলি, জমা জলে মৃত্যুমিছিল অব্যাহত।