কলকাতা: বিশ্ব উষ্ণায়নের (Global Warming) প্রভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা। সমুদ্রে জলের মাত্রা (Sea level) বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন নিচু জায়গা জলের তলায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে জঙ্গল সাফ করে দেওয়ার ফলে পাহাড়ে ধস নামার আশঙ্কাও বাড়ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনস্থ সংস্থা ইন্টারগভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) রিপোর্টে কলকাতা (Kolkata), সুন্দরবন (Sundarbans) ও উত্তরবঙ্গ (North Bengal) নিয়ে বিশেষ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।


আইপিসিসি-র ওয়ার্কিং গ্রুপের ষষ্ঠ পর্যালোচনা রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) বিষয়ে জানানো হয়েছে, ‘সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যে দেশগুলির বিপদ সবচেয়ে বেশি, তার অন্যতম ভারত। চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভারতের প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যার শিকার হতে পারেন। এই শতাব্দীর শেষদিকে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি মানুষ বিপদগ্রস্ত হতে পারেন। ২০৫০-এর মধ্যে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বাস্তুতন্ত্র বদলে যেতে পারে। ২১০০-র মধ্যে জীবিকার ধরনেও বদল আসতে পারে। নিচু অঞ্চলগুলি ডুবে যাওয়ার ফলে বহু মানুষকে অন্যত্র সরে যেতে হবে। ফলে শহরগুলির উপর চাপ বাড়বে।’


বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কলকাতা, টোকিও, ওসাকা, করাচি, ম্যানিলা, তিয়ানজিন, জাকার্তার মতো শহরগুলিতে বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ভূমিধস, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো বিপদ আসতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সমস্যায় পড়তে পারেন প্রায় ১৫ কোটি মানুষ।’


আইপিসিসি-র রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, কলকাতায় প্রতি বছর দেড় ডিগ্রি করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে পরিবর্তন আসতে পারে।


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শহরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ দিনে দিনে কমছে। ২০৩০-এর মধ্যে এশিয়ার বহু শহরে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ আরও কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কলকাতা, দিল্লি, করাচির মতো শহরের কয়েক কোটি মানুষ সমস্যায় পড়তে পারেন।


আইপিসিসি-র রিপোর্টে কলকাতা নিয়ে বিশেষ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সমুদ্রের তলদেশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ২০৫০ সালের কলকাতা বসবাসের অযোগ্য শহর হয়ে উঠতে পারে। কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে ফের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।


জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবনের নিচু অঞ্চল ও ছোট দ্বীপগুলি জলের তলায় চলে যেতে পারে। ফলে সেখান থেকে মানুষজনকে অন্যত্র সরে যেতে হতে পারে। তাঁদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে।


উত্তরবঙ্গ নিয়েও আইপিসিসি-র রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের ফলে নদীগুলির উপর প্রভাব পড়ছে। অপরিকল্পিতভাবে গাছ কেটে ফেলার ফলে ধসের আশঙ্কা বাড়ছে।


জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিপদ আসছে, তা মোকাবিলায় এখন থেকেই তৎপর হতে হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, আগামী ১০-১৫ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবুজায়নের উপর জোর দিতে হবে। জলাশয়গুলিকে রক্ষা করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।