কলকাতা: তিলজলায় সাত বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতন ও খুনের মামলায় ফাঁসির সাজা ঘোষণা। ফাঁসির সাজা ঘোষণা করলেন আলিপুর আদালতের বিচারক। আলিপুরের বিশেষ POCSO আদালতের বিচারক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, "এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ। অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা ছিল না শিশুটির।" ২০২৩-র ২৬ মার্চ ওই ঘটনা ঘটে। খুনের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। (Tiljala Case Verdict)


একদিন আগেই ধৃতকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩ নং, ২০১ নং, ৩৭৭ নং, ৬ POCSO Act, ৩৭৬ এ ও বি এবং ৩০২ ধারার প্রত্যেকটিতে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। অপহরণ, তথ্যপ্রমাণ লোপাট, ধর্ষণ ও খুন সব ধারাতেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছে অপরাধী। ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয় খুনের মামলায়। যে নৃশংসতার সঙ্গে শিশুটিকে খুন করে সে, তা বিরলতম ঘটনা বলে মত আদালতের। শিশুটির উপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে বলে জানান বিচারক। 


২০২৩ সালের ২৬ মার্চ পার্ক সার্কাস-সহ সংলগ্ন এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জানা যায়, তিলজলা এলাকায়, সাত বছরের একটি শিশু আবাসনের নীচে কর্পোরেশনের গাড়িতে আবর্জনা ফেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। কোনও ভাবেই তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলা হয় পুলিশের গাড়িতেও। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা এবং তিলজলা থানার পুলিশ মিলে তদন্ত শুরু করে। (Alipore POCSO Court)



তদন্তে নেমে একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সামনে আসে। তাতে দেখা যায়, শিশুটি বাড়ির নীচে নামছে। সেখান থেকে কোথায় গেল শিশুটি, প্রশ্ন ওঠে। এলাকার প্রত্যেকটি বাড়িতে, আবাসনের ফ্ল্যাটগুলিতে তল্লাশি শুরু হয়। তাতে এক যুবকের ফ্ল্যাটে গ্যাস সিলিন্ডার রাখার জায়গা থেকে বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হয় শিশুটির। হাত-পা বেঁধে বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল শিশুটিকে। তার চোখও খুবলে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলে জানা যায়।


তদন্তে উঠে আসে, আবর্জনা ফেলে উঠে আসার সময় প্রতিবেশী ওই যুবক শিশুটিকে হাত ধরে টেনে ঘরে ঢুকিয়ে নেয়। এর পর হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয় তাকে। মারধরও করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এর পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় শিশুটিকে। ওই পেশায় ডেলিভারি ম্যান বলে জানা যায়।


এর পর ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ, যৌন নিগ্রহ, ধর্ষণের মতো ধারায় মামলা দায়ের হয়। আলিপুরের POCSO আদালতে মামলাটি চলছিল এতদিন। মোট ৪৫ জনের বয়ান রেকর্ড করে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা। সাক্ষীদের সকলের বয়ানই আসামির বিরুদ্ধে যায়। শেষ পর্যন্ত বুধবার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার ফাঁসির সাজা ঘোষণা করা হল। বিচারক এদিন সাফ জানান, যে ঘটনা ঘটিয়েছে অপরাধী, তা বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। প্রতিবেশী শিশুটিকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে সে। শিশুটি বাঁচার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছিল। অপরাধীর শক্তির সঙ্গে পেরে ওঠা বা নিজেকে বাঁচানোর ক্ষমতা ছিল না তার।