শিবাশিস মৌলিক, দীপক ঘোষ, বিজেন্দ্র সিংহ, কলকাতা : পাঁচতারা রিসর্টে দলের প্রশিক্ষণ শিবির । আর সেখানেই দেখা নেই বিজেপির ( BJP )  ৫ সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। এর জেরে নাকি বিজেপির অন্দরেই অস্বস্তি। এই নিয়ে বাইরে সবাই মুখে কুলুপ দিলেও, বিরোধীদের মুখ কে বন্ধ করবে। গেরুয়া শিবিরের এই 'অস্বস্তি' নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ । 



অনুপস্থিত কারা 
রাজারহাটের ( Rajarhat ) বিলাসবহুল বৈদিক ভিলেজ রিসর্টে চলছে বঙ্গ বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবির। মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিনের মতো, এদিনও হাইভোল্টেজ শিবিরে দেখা যায়নি কোচবিহারের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামানিক, বনগাঁর সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, আলিপুরদুয়ারের সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লাকে। প্রশিক্ষণ শিবিরে আসেননি বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ এস এস অহলুওয়ালিয়া। 


দিলীপ ঘোষের হয়ে কথা কুণাল ঘোষের
এবং ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম। হেভিওয়েট মন্ত্রী-সাংসদদের এই অনুপস্থিতি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। সূত্রের খবর, বঙ্গ বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাঁদের অনুপস্থিতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এদিকে বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবিরে, পাঁচ সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই খোঁচা দিতে ছাড়েনি তৃণমূল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এক্ষেত্রেও দিলীপ ঘোষের হয়ে কথা বলতে শোনা গেছে কুণাল ঘোষকে।


 তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ খোঁচা দিয়ে বলেন, ' বিজেপির বুথ কমিটি আর গোরুর গাড়ির হেডলাইট দুটোই সমান। না আছে বুথ। তার আবার কমিটি। দিলীপ বাবু আবার দেখলাম পোস্টারে বাদ। ট্রেনি সভাপতি আছে, দলবদলু বিরোধী দলনেতা আছে। এর পর আপনি যেতে পারবেন ওখানে? আত্মসম্মান তো আপনার আছে। ' 


বিজেপির উত্তর 
রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ' যা খুশি জল্পনা করতে পারেন। আমাদের প্রশিক্ষণ শিবির কীভাবে চলতে পারে, কারা আসবেন, কারা আসতে পারবেন না, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের। তিন জন মন্ত্রী সরকারি কাজের জন্য আসতে পারেননি। জানা ছিল।' 


বঙ্গ বিজেপির মেগা প্রশিক্ষণ শিবিরে অনুপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে যোগ দিতে রাজস্থানে গেছেন তিনি। বুধবার যাবেন মুম্বইয়ে। সেখানে আরেকটি বৈঠক আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বলেন, ' আমি রাজ্যে নেই, বাইরে আছি। ডাক পেয়েছি, আমার দফতরের কাজ ছিল। আমি বাইরে ছিলাম কাজে, আসতে পারব না। আমি জানিয়ে দিয়েছি।' 


এদিকে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে গরু পাচার ও কয়লা পাচার মামলায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে বিজেপি। উল্টোদিকে কল্যাণী এইমসে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে, নাম জড়িয়েছে বিজেপির সাংসদ, বিধায়কদের। সূত্রের খবর, এই প্রেক্ষাপটে বৈদিক ভিলেজের প্রশিক্ষণ শিবিরে বিজেপির নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সবাই যেন অবৈধ আয় থেকে দূরে থাকেন।


BJP নেতা অনুপম হাজরা জানান, 'আমরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছি দুর্নীতি নিয়ে। আমাদের নেতাদের মধ্যে যদি দুর্নীতি দেখা যায়, তাহলে তো আঙুল তোলাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের উচিত সততা নিয়ে থাকা, যাতে কোনও দিন ইডি সিবিআই বাড়িতে যায়, তাহলে যে হাসি মুখে ওয়েলকাম করতে পারেন। সেই জন্য প্রশিক্ষণ শিবিরে যা বলেছে, অবৈধ ইনকাম থেকে দূরে থাকা উচিত। ' 


তৃণমূল কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ' বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবিরে কি হচ্ছে? কীসের প্রশিক্ষণ? সাঁতার কাটা, স্পা করার প্রশিক্ষণ। ওরা ইডি-সিবিআই ছাড়া পা ফেলতে পারছে না। জীবন শৈলির চর্চা করতে এসে রাজনৈতিক কী বলছে তাতে কিছু যায় আসেনা।' 


সূত্রের খবর, বুধবার প্রশিক্ষণ শিবিরের শেষ দিনে উপস্থিত হবেন বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ। দলীয় সূত্রে খবর, তাঁর সঙ্গে শিবিরে যোগ দিতে পারেন এ রাজ্যের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীরা।