কলকাতা : মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে (Maharashtra Politics) বেশ কয়েকদিনের টানাপোড়েন শেষ। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন একনাথ শিণ্ডে (Eknath Shinde), তা-ও আবার বিজেপি-রই সমর্থনে। উপ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন দেবেন্দ্র ফড়ণবীস। মহারাষ্ট্রের এই সামগ্রিক নাটকের পর প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি কুর্সিই সব ? নীতি-নৈতিকতার কি কোনও ঠাঁই নেই সেখানে ? চাঁচাছোলা ভাষায় এই প্রসঙ্গে উত্তর দিতে গিয়ে আইপিএল নিলামের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার (Kunal Sarkar)। তাঁর বক্তব্য, এত ভোটাভুটির লাভ কী আছে ! একেবারেই নিলামে নেমে আসি না কেন।


রাজনীতির এই 'অসুখ' নিয়ে চিকিৎসক কুণালের বক্তব্য, "দলবদল কি শুধু আমরা মহারাষ্ট্রে দেখেছি ? গত ভোটের আগে ও পরে পশ্চিমবঙ্গে যেরকম দলবদল দেখলাম, তাতে আমার স্কুলে ফিজিক্সে ম্যাগনেটিজিমের এক্সপেরিমেন্টের কথা মনে পড়ে যায়। কতগুলো পেরেক থাকত এবং পেরেকের সামনে একটা চুম্বক থাকত। পেরেকের সামনে চুম্বকটা নিয়ে গেলে পেরেকগুলি এদিকে হুড় হুড় করে চলে আসত বা চুম্বকটা অন্যদিকে রাখলে হুড় হুড় করে পেরেকগুলো অন্যদিকে চলে যেত। দলবদলের এই ফর্মকে আমরা উচ্চ মার্গীয় সঙ্গীতের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং, এই রাজ্যের নাগরিক হয়ে শুধু হয়তো মহারাষ্ট্রের দিকে আঙুল তোলা ঠিক হল না।


আরও পড়ুন ; ডানা ছাঁটলেন একজনের, ফেরার রাস্তা আটকালেন অন্যজনের, মহারাষ্ট্রে কোন সমীকরণ শাহের!


এবার প্রশ্ন হল কেন ? এপ্রসঙ্গে চিকিৎসক বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি যে আগামী পাঁচ বছর ধরে তাঁর সাংবিধানিক ভূমিকা পালন করবেন, তাঁর মধ্যে কাঠিন্য-দৃঢ়তা, সেই সাংবিধানিক ভাষার ব্যাকারণটাকে আমরা ছেলেখেলার জায়গায় নামিয়ে এনেছি। বারবার এটা দেখতে বাধ্য হচ্ছি। যতই নিয়মের আঁকিবুকি করি না কেন, এই নিয়মগুলোকে পাস কাটিয়ে যাওয়া অনেক সহজ। স্বাধীন উত্তর ভারতে প্রথম দুই দশক আমরা প্রায় সিঙ্গল পার্টি গণতন্ত্র দেখেছিলাম। সেই দুই দশক পরে যখন বহুদলীয় গণতন্ত্র আসছে, তখন প্রতিবার যেন কেন্দ্র থেকে কেন্দ্রীভূত একটা খিদে। যখন বারবার প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত খিদে পায়, তখন চিকিৎসকরা ডায়গনসিস করেন ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলার বোধ হয় ডায়াবেটিস হয়েছে। আমরা যেন কোথাও ৬০-৭০ দশক থেকে একটা পলিফেজিক ডায়াবেটিক ডেমোক্রেসির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নিজের জনপ্রতিনিধি নিয়ে খুশি নয়। দলমত পার্টি নির্বিশেষে বারবার সে হাত বাড়াচ্ছে - আজ এখানে সরকার ফেলব, আজ ওখানে ছক পাল্টে দেব। যা-ই নিয়ম কানুন করি না কেন, সেগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।"


তাঁর প্রশ্ন, "তাহলে এত ভোটাভুটির লাভ কি আছে ! একেবারেই নিলামে নেমে আসি না কেন। সবাই যদি মনে করেন আমরা এত তাবড় রাজনীতিবিদ, তাহলে নিজের কপালে নিজের মূল্যটা লিখে নিন। ভারতে কি নিয়ম-নীতি নেই ? আছে। কার জন্য আছে ? মধ্যবিত্তের জন্য। বিভিন্ন পেশাদারদের জন্য আছে। ভারত বেঁচে আছে মধ্যবিত্তদের নৈতিকতার জন্য। আপনি যদি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক লোন নিয়ে তা না শোধ করেন, আপনাকে ছিনে ঝোঁকের মতো খেয়ে শেষ করে দেবে। যে মুহূর্তে আপনি ৫০০ কোটি টাকা লোন নিয়ে শোধ না দেবেন, সেই মুহূর্তে আপনি ফ্রডুলেন্ট সেলেব্রিটি। আর রাজনৈতিক তকমা থাকলে তো কথাই নেই। আমরা কোন পথে এগিয়ে চলেছি ?"