আবির দত্ত, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষকে নিয়ে বিস্ফোরক দাবি ইডির। মামলার চার্জশিটে ইডি দাবি করেছে কুন্তল ঘোষ একাই তুলেছিলেন ১০০ কোটি। নিয়োগ দুর্নীতিতে অন্যতম অভিযুক্ত কুন্তলের জীবনের শুরুটা কিন্তু অন্যরকম। একটি উড়ান সংস্থার গ্রাউন্ড ক্রিউ (Ground Crew) হিসেবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কুন্তল। কখনও কোনও ইনস্টিটিউট খুলেছেন। কখনও আমদানি-রফতানির সংস্থা খুলেছেন। কখনও জমির দালালি করেছেন। কিন্তু রকেটগতিতে তার উত্থান নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়ানোর পরেই। এই সময়েই হু হু করে বেড়ে যায় তাঁর উপার্জন, এমনটাই দাবি ইডির।
তিনি কোথা থেকে কোথায় পৌঁছেছিলেন, সেই তথ্য় উঠে এসেছে ইডি-র চার্জশিটে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, কুন্তল ঘোষ জানিয়েছেন যে তিনি একটি উড়ান সংস্থার গ্রাউন্ড ক্রিউ হিসেবে কাজ করতেন। ৩ মাস সেই কাজ করেন তিনি। কিছুদিন পর আবার আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত একটি সংস্থা খোলেন তিনি। বাংলাদেশে গম রফতানি করতো সেই সংস্থা। এর মধ্য়ে ৩২ লক্ষ টাকা খরচ করে ইন্দ্রানী দেবী নামে ইনস্টিটিউট খোলেন কুন্তল। তার সেক্রেটারি হিসেবে কুন্তলের মাইনে ছিল মাসে ৪০ হাজার টাকা। এসবের পাশাপাশি কিছুদিন জমির দালালিও করেন তিনি।
তদন্তে উঠে এসেছে, ইন্দ্রানী দেবী ইনস্টিটিউটের সম্পাদক ছিলো কুন্তল, মা ছিলেন ট্রেজারার, স্ত্রী সভাপতি। মাসিক আয় ৪০ হাজার। যেটা সামনে থেকে দেখানো হয়েছে, তার পিছনে আরও বড় অঙ্ক লুকনো রয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ইডি সূত্রে দাবি, এরপরই নিয়োগ দুর্নীতির চক্রে জড়িয়ে পড়েন কুন্তল। সেই সঙ্গে তাঁর ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্টে বাড়তে থাকে টাকার বহর। কুন্তল ঘোষের নাম উঠে এসেছিল মানিক ভট্টাচার্যর ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের মুখে। ইডি-র চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, কয়েকজনের নিয়োগের জন্য় কুন্তলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাপস মণ্ডল।
কত টাকার লেনদেন?
১৫ দিন পর কুন্তল জানান, টেট পাস করার জন্য প্রার্থীপিছু ১ লক্ষ টাকা আর নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য ৫ লক্ষ টাকা লাগবে। তাপস মণ্ডল তাঁকে জানান, তাঁর কাছে ৩২৫ জনের লিস্ট আছে। সেই মতো তাপস মণ্ডল ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দেন। কুন্তল জানান, ৩২৫ জনের মধ্যে ১০ জনের সিলেকশন হয়ে যাবে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফের কুন্তলকে ১ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা দেন তাপস মন্ডলের এক কর্মী। এরপর তাপস মণ্ডলের বলা ৩২৫ জন প্রার্থীই পাস করে যান। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মধ্যে, নিয়োগের জন্য় আরও ১০ কোটি টাকা দেন তাপস মণ্ডল।
ইডি-র চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে যে তাপস মণ্ডলের একটি ডায়েরিও পাওয়া গেছে। যার ৫০ নম্বর পাতায় অনেক হিসেব লেখা আছে। পাতার হেডিং "অর্গ্য়ানাইজার"। ডায়েরির ৫১ ও ৫২ নম্বর পাতায় হেডিং ছিল "আপার"। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল অঙ্কের টাকা কি কুন্তলব ঘোষের কাছে গেছিল? এভাবেই কি উড়ান সংস্থার সামান্য় গ্রাউন্ড ক্রিউ থেকে একশো কোটির মালিক হয়ে উঠেছিলেন তিনি?
কুন্তল হয়ে টাকা আর কার কার কাছে পৌঁছেছিল? ইডির দাবি অনুযায়ী, সাড়ে তিনশো কোটির এই দুর্নীতির টাকায় লাভবান হয়েছেন আরও অনেকে। তারা কারা? কবে সামনে আসবে? চলছে উত্তরের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: রাস্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী-উধাও অশান্তি, নির্বিঘ্নে কাটল হনুমানজয়ন্তী