প্রকাশ সিনহা, সুকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং আশাবুল হোসেন, কলকাতা: চাকরির নামে ১৩০জনের কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা করে নিয়েছিলেন কুন্তল। কোর্টের অর্ডার বের করার নামেও ১২০০ জনের কাছ থেকে তুলেছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকা! অর্পিতার (Arpita Mukherjee) ফ্ল্যাটে পাওয়া ৫০ কোটির মধ্যে ছিল কুন্তলের (Kuntal Ghosh) টাকাও। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডের তদন্তে চাঞ্চল্যকর দাবি করল ইডি (ED)। শুধু তাই নয়, কুন্তলের বাড়ি থেকে ডিসেম্বরের টেটের ২৫০ ওএমআর শিট পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

  


গত বছরের ২২ জুলাই, এই ছবি দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছিল রাজ্যবাসীর। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ইডি সূত্রে দাবি, অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া এই রাশি রাশি টাকার মধ্যে ছিল নিয়োগদুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের দেওয়া টাকাও!


কুন্তল ও তাঁর সহযোগীদের মারফৎ কোটি কোটি টাকা পৌঁছে যেত পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অন্যান্য প্রভাবশালীদের কাছে। শুক্রবার, নগর ও দায়রা আদালতে চাঞ্চল্য়কর দাবি করে ইডি। এদিন, আদালতে জামিনের আবেদন জানান কুন্তলের আইনজীবী। তার বিরোধিতা করে, ইডি দাবি করে, কুন্তলের ২ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকার হদিশ মিলেছে। সেগুলি ডিপোজিট করার পর আবার অনত্র্য ট্রান্সফার করা হয়। এই টাকার উৎস কী? কাকে লেনদেন করা হয়েছে? জানতে, ফের কুন্তলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তারা। ইডির তরফে দাবি, ১৩০ জন চাকরিপ্রার্থীর থেকে ৮ লক্ষ টাকা করে নিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ।  অর্থাৎ, চাকরি বিক্রির নামে ১০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন যুব তৃণমূল নেতা। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, কোর্ট থেকে চাকরির অর্ডার করিয়ে দেবেন, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ১২০০ চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে নিয়ে নিয়েছিলেন কুন্তল।


অর্থাৎ, এক্ষেত্রে অঙ্কটা ২ কোটি ৪০ লক্ষ। এখানেই শেষ নয়। রয়েছে আরও পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগও। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। স্বচ্ছ নিয়োগের কথা বলছে কমিশন। তখন দেড় মাস আগে, ডিসেম্বরের টেটের ২৫০টি ওএমআর শিট পাওয়া গেছে কুন্তলের বাড়ি থেকে। এমনই মারাত্মক অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। ইডি সূত্রে দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে কুন্তল দাবি করেছেন, আরটিআই করে, ওএমআর শিটগুলি তিনি পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, কেন RTI করেছিলেন তিনি? করলেও, RTI-এ দেড়মাসের মধ্যে হাতে চলে এল ওএমআর শিট? ইডির তরফে দাবি, এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি কুন্তল ঘোষ। ইডির তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, রুপোলি দুনিয়াতেও টাকা ইনভেস্ট করেছিলেন কুন্তল। এদিন, কুন্তলের আইনজীবী পাল্টা বলেন, তাপস মণ্ডলের মুখে প্রথম আসে কুন্তলের নাম। তাপসের নাম চার্জশিটেও রয়েছে। অথচ তাঁকে গ্রেফতার করা হল না কেন? আদালত থেকে বেরনোর সময়ও একই প্রশ্ন শোনা যায় কুন্তলের মুখে? 


এদিকে এরইমধ্যে বিস্ফোরক দাবি করেছেন কুন্তল ঘোষ।  নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা বলেন, 'এটা বিজেপির বড় একটা ষড়যন্ত্র, এর সবটা বলব আপনাদের চলুন। বলছি বলছি, পুরোপুরি বিজেপির, তাপস মণ্ডলের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক রয়েছে, তারা কীভাবে দলকে হেনস্থা করতে হয়, সবটা বলব।' 


আরও পড়ুন, মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দ্রুত গতিতে উত্থান আদানির? অভিযোগ বিরোধীদের


অন্যদিকে তাপস মণ্ডল বলেন, 'ঠিক আছে, ও বলুক না, তদন্তকারী সংস্থার কাছে বলুক, কার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, কিম্বা আদালতে নাম বলুক না, আমি রাজনীতি করি না। পরিচয় অনেকের সঙ্গে রয়েছে, সব দলের নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় আছে, তাহলে কী বোঝায়, পরিচয় থাকবে না। আমি একটা সংগঠন করি অরাজনৈতিক সংগঠন, রাজনৈতিকভাবে তো কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। কলেজের অনুষ্ঠানে অনেকে এসেছেন, তো কী হল।' 


বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, এরা বারবার যখনই কিছু হয়, বিজেপিকে প্যাচানোর, নিজেদের মধ্যে ঢোকানোর চেষ্টা করে। বিজেপি কোনও দুর্নীতিতে নেই, তৃণমূল উপর থেকে নীচ পর্যন্ত দুর্নীতিতে ভরে গেছে। সিবিআই, ইডি তদন্ত করলেই বুঝতে পারবে, কে আসল চোর। তাপস মণ্ডল, শান্তনু সব একই পথের পথিক।


শুক্রবার ফের কুন্তল ঘোষকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।