প্রকাশ সিন্হা, আশাবুল হোসেন, সুদীপ্ত আচার্য: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় (SSC Case) ফের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) জানিয়েছে, বিভিন্ন এজেন্টের কাছ থেকে মোট ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন শীল (Ayan Sheel)। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং অয়নের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেছেন কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh)। মোট পাঁচটি সংস্থার মাধ্যমে দুর্নীতির টাকা পাচার করা হত। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে পেশ করা চার্জশিটে এমনই দাবি করল ED। 


প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং ধৃত প্রোমোটার অয়নে মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করতেন বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল কাজ করেছেন বলে চার্জশিটে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছে ইডি। সোমবার বিশেষ ED আদালতে ১১৩ পাতার চার্জশিট পেশ করে তারা জানিয়েছে, শুধুমাত্র ২০১৪ সালের টেট নয়, ২০১২ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের অবৈধ ভাবে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রেও, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং অয়নের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেছিলেন কুন্তল।


নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ, কুন্তল, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ প্রোমোটার অয়ন, চার জনই জেলবন্দি রয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জমা দেওয়া চার্জশিটে ED দাবি করেছে, বিভিন্ন এজেন্টের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন। এমনকি শান্তনুর নির্দেশেই কুন্তলকে ১৯ কোটি ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন আর এক ধৃত তাপস মণ্ডল, দাবি করেছে ইডি। 


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: মামলায় অভিষেককে পক্ষ করার নির্দেশ, বিচারপতি বদল হলেও, অভিষেককে নিয়ে পাল্টাল না কোর্টের নির্দেশ

এখানেই শেষ নয়, নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে কুন্তলের থেকে ১ কোটি টাকা নিয়েছিলেন শান্তনু। চার্জশিটে আরও দাবি করা হয়েছে,
অয়ন জেরায় স্বীকার করেছেন, ৪৫ কোটির মধ্যে ১৮ কোটি টাকা নিজে রেখেছিলেন এবং বাকি ২৬ কোটি টাকা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়কে দিয়েছেন। সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল কুন্তলের নির্দেশে। সম্প্রতি পার্থ-ঘনিষ্ঠ ওই ব্যবসায়ী তথা তৃণমূল নেতা সন্তুর মহেশতলার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় CBI.


শান্তনুর DIP ডেভলপার্স ও ইভান কনস্ট্রাকশন  এবং অয়নের ABS ইনফোজোন, শুক্লা সার্ভিস স্টেশন ও দ্য ফসিলস, এই পাঁচটি সংস্থার কথা উল্লেখ করে চার্জশিটে ED দাবি করেছে। ওই সমস্ত সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা পাচার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অয়নের সম্পত্তির খতিয়ান তুলে ধরে ED জানিয়েছে, যে স্থাবর সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে, তার বাজার মূল্য ১০ কোটি ৪ লক্ষ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা।
গাড়ি রয়েছে ৬৪ লক্ষ টাকার।  শেয়ার রয়েছে ২৩ লক্ষ টাকার।

এছাড়াও চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে, ABS টাওয়ার নামে বহুতলেই অয়নের ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এমনকি অয়নের বিরুদ্ধে OMR শিট বিকৃত করার অভিযোগ তোলা হয়েছে চার্জশিটে। অন্য দিকে শান্তনুর ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকার ১২টি অস্থাবর সম্পত্তির হদিশ মিলেছে বলে দাবি করেছে ED. এছাড়াও সাতটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪৭ লক্ষ টাকা।

চার্জশিট পেশ করে এদিন আদালতে ED-র আইনজীবী মন্তব্য করেন, "একজন দুর্নীতিগ্রস্ত দেশকে পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারেন।" ED-র নজরে রয়েছেন অয়ন ঘনিষ্ঠ শ্বেতা চক্রবর্তীও। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট এবং একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এ নিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "আদালতে বিচার হচ্ছে। আইন আইনের পথে চলবে।"