ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, লাভপুর: মন্দির একটিমাত্র, ভিতরে মূর্তি তিনটি (Diwali 2022)। সবচেয়ে উঁচু মূর্তির উচ্চতাই ২৬ ফুট। তা দেখতে প্রতি বছর ভিড় করেন হাজার হাজার মানুষ (Kali Puja 2022)। বীরভূমের (Birbhum News) ঐতিহ্যপূর্ণ কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম লাভপুরের এই দোনাইপুরের মা কালী। পুজোর বয়স প্রায় ২৫০ বছর। শিশুদের ট্যাবা রোগ হলে, তার নিরাময়ে এই মন্দির থেকে মাদুলি সংগ্রহ করে পরিয়ে দিলে, নিরাময় হয় বলে বিশ্বাস স্থানীয়দের (Labhpur News)। 


মন্দির একটি, ভিতরে মূর্তি তিনটি, লাভপুরের ট্যাবা কালী বিখ্যাত


জনশ্রুতি রয়েছে যে, প্রায় ২৫০ বছর আগে লাভপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পদাধিকারী জমিদার এই গ্রামে মা কালীর পুজো শুরু করেন। কোনও কারণে এই পুজোর ভার পরবর্তী কালে দোনাইপুরের পাঠকদের হাতে ওঠে। পাঠক বংশের ত্রৈলোক্যনাথ পাঠক ছিলেন তান্ত্রিক। কথিত রয়েছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে মন্দিরে 'ট্যাবা কালী' মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন। 


এই নামের নেপথ্যে যে কাহিনি রয়েছে, তা হল, শিশুদের ট্যাবা রোগ হলে এই মন্দিরে এসে হত্যে দিতেন বাবা-মায়েরা। সেখান থেকে মাদুলি, কবচ বানিয়ে নিয়ে গিয়ে পরিয়ে দিতেন অসুস্থ ছেলেমেয়ের গলায়। তাতেই অসুস্থ শিশুরা সুস্থ হয়ে উঠতেন বলে বিশ্বাস ছিল স্থানীয় মানুষদের। সেই বিশ্বাস আজও অটুট। তার জন্য আজও প্রতি শনি-মঙ্গলবার এবং অমাবস্যায় প্রচুর মানুষ ভিড় করেন মন্দিরে। 


আরও পড়ুন: Panskura : দলবিরোধী কাজের অভিযোগ, পাঁশকুড়ার বিদায়ী কাউন্সিলর-সহ ৪ নেতাকে বহিষ্কার করল বিজেপি


 মন্দিরের ভিতরে তিনটি কালীমূর্তি পুজো করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ত্রৈলোক্যনাথ নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর অবর্তমানে গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার পুজো করে আসছে। প্রায় ১৫০ বছরেরও সময় ধরে সেখানে একই ভাবে পুজো হয়ে আসছে। তিনটি মূর্তির মধ্যিখানে থাকেন বড়মা, তাঁর উচ্চতাই ২৬ ফুট। বাঁ দিকে থাকেন ট্যাবা কালী। ডান দিকে রয়েছেন মা বিশ্বেশরী। এই দুি মূর্তির উচ্চতা ১২ ফুট করে। কালীপুজোর রাতে তিনজন তান্ত্রিক এবং তিনজন পুরোহিত পুজো করেন। 


তান্ত্রিক এবং পুরোহিত দিয়ে পুজো হয়


সারাবছরই মন্দিরে মা কালীর কাঠামো রেখে নিত্যয় সেবা করা হয়। মন্দিরের সেবায়েত প্রিয়ব্রত চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ এই পুজোর প্রচলন করেন। কথিত আছে, যিনি পুজো প্রথম শুরু করেন,তিনি চোখে দেখতে পেতেন না। তাই সকলেই তাঁকে কানাকর্তা বলে ডাকতেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কালীপুজোর দিন তিনি সমস্ত কিছু স্পষ্ট ভাবেই দেখতে পেতেন। দোনাইপুরের কালীপুজোর বিশেষত্ব হল, বিসর্জন। সে দিন পুজো চলাকালীন মায়ের কাছে দেওয়া আলতা ও সিঁদুর নিয়ে গ্রামের সকলে মাখেন। তার পর মন্দির লাগোয়া পুকুরে এক সময়ে তিনটি মূর্তি বিসর্জন করা হয়।