কলকাতা: লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ বাড়ানোোর আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি বিজেপি সাংসদের। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা ১০০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা করা হোক, মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানালেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাত। শাসকদলের মদতে রাজ্যে ফড়েদের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে, তার জেরেই জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া বলে দাবি করেছেন জ্যোতির্ময়। সাধারণ মানুষের যাতে সুরাহা হয়, তার জন্যই টাকা বাড়ানোর আর্জি বলে জানিয়েছেন তিনি। (Lakshmir Bhandar)
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সূচনা করেন মমতা। প্রকল্পের আওতায় শুরুতে মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হতো রাজ্যের মহিলাদের। পরবর্তীতে টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে মাসে ১০০০ টাকা করা হয়। তফসিলি-জনজাতিদের ১২০০ টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই টাকা আরও বাড়ানোর আবেদন জানালেন জ্যোতির্ময়। (BJP Jyotirmoy Mahato on Lakshmir Bhandar)
সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন জ্যোতির্ময়। তাঁর বক্তব্য, 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ বাড়িয়ে ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ করা হোক। তৃণমূলের মদতে রাজ্যে ফড়েরাজের রমরমা চলছে। সেই কারণেই মূল্যবৃদ্ধি আকাশছোঁয়া। এমন পরিস্থিতিতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ১০০০ টাকা মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়'। মমতাকে লেখা চিঠি নিয়েই পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। জ্যোতির্ময় লেখেন, 'পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বাড়ি থেকে যেভাবে কোটি কোটি মজুত টাকা উদ্ধার হচ্ছে, সেই সব সাধারণ মানুষের টাকা পশ্চিমবঙ্গের মা, বোন তথা নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে ২০০০ টাকা করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবেদন জানালাম'।
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের আগে সম্প্রতি 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে'র অনুকরণে সেখানে 'লড়কি-বহিন যোজনা' চালু করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। সেই প্রকল্পের আওতায় মহিলাদের অ্যাকাউন্টে ১৫০০ টাকা করে প্রতি মাসে ফেলা হবে বলে জানানো হয়। এমনকি নির্বাচনের আগে, সেইবাবদ, কয়েক মাসের টাকা এককালীন জমাও দেওয়া হয় মহিলাদের অ্যাকাউন্টে। আবার ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় এলেও একই ভাবে মহিলাদের ২৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি।
মমতাকে লেখা চিঠিতে মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডেরও উল্লেখ করেছেন জ্যোতির্ময়। তাঁর বক্তব্য, 'মহারাষ্ট্রে মহিলাদের ১৫০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডেও ২৫০০ টাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাংলায় নারীর ৭মতায়নের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বরাদ্দ বাডিয়ে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা করা হোক'।
এই 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি বাংলার রাজনীতিতে। মহিলা ভোট কুড়োতেই মমতা এই প্রকল্পের সূচনা করেছেন বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি নিজেই 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে'র বরাদ্দ বাড়িয়ে ৩০০০ টাকা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। রাজ্যে গেরুয়া শিবির ক্ষমতায় এলে প্রতি মাসে মহিলারা আগের চেয়ে বেশি টাকা পাবেন বলে ঘোষণা করেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মমতার 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' বন্ধ করে আলাদা প্রকল্প এনে আরও ১০০ টাকা বেশি দেওয়া হবে বলে জানান। সেই নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শানাতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বার বার বাংলায় পরাজিত হয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা, আবাস যোজনার টাকা যেখানে বন্ধ করে দিয়েছে, ক্ষমতায় এলে তারা 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার'ও বন্ধ করে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কিন্তু এবার খোদ বিজেপি সংসদই 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে'র বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানালেন। যদিও এর নেপথ্যে রাজনৈতিক কৌশল থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। যে 'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' প্রকল্প নির্বাচনে তৃণমূলকে বাড়তি সুবিধা দেয়, তার টাকা বাড়ানোর কথা বলে বিজেপি আসলে তৃণমূলের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকেই।