প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ছবির মতো সুন্দর মিরিক এখন যেন ধ্বংসপুরী। এক রাতের দুর্যোগ বদলে দিয়েছে সেখানকার মানুষের জীবনযাপন। মিরিকের এই ছবি পর্যটকদের কাছে কার্যত অচেনা। বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে মিরিকের পর্যটনেও। তাতেই কার্যত কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ব্য়বসায়ীদের।
দুর্গোৎসব, দীপাবলি। পুজোর ছুটি । সমতলে ছুটির মরশুম মানেই পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড়। আর পুজো পেরোলেই পাহাড়ে ফুল ফোটার সময়। নভেম্বর রোজে সেজে ওঠে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়ং। রঙের উৎসব লাগে পাহাড়ের ঢালে। আর এর মাঝেই প্রকৃতির এত বড় ধাক্কা। আর সেই অভিঘাতে তছনছ সবটা। পাহাড়ি মানুষের ঘর ভরা শুধু শূন্যতা। কবে আবার হোটেল হোম স্টে ভরবে, গাড়ির বুকিং হবে, ভেসে যাওয়া দোকানগুলো আবার করে নতুন করে গড়ে তুলতে পারবেন, জানেন না সর্বহারা মানুষগুলো। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের দাবি, এই সময়ে অন্য়ান্য় বছর যে পরিমাণ ভিড় থাকে, বিপর্যয়ের পর শেষ কয়েকদিনে সেই তুলনায় অনেক কম সংখ্য়ক পর্যটক আসছেন মিরিকে। তবে রাস্তার হাল ঠিক হলে পরিস্থিতি বদলাবে এমনটাই আশা করছেন হোটেল ব্যবসায়ী থেকে পর্যটকরা।
বৃষ্টি থামলেও মিরিকের চারিদিকে এখন ধ্বংসের ছবি। ধারাগাঁও, মিরিকের ছোট্ট গ্রামের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত। মৃত্যুও হয়েছে অনেকের। বাড়িগুলোতে পলিমাটির স্তূপ। ঘর বলে কিছু নেই। জিনিসপত্রের ওপর পলিমাটির চাদর। দরজা দিয়ে নয়, কেউ কেউ জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকেছেন। সরকার পাশে দাঁড়াক, চাইছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পর্যটনের পাশাপাশি পাহাড়ের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড চা শিল্প। কিন্তু, প্রকৃতির রুদ্র রোষে, ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক চা বাগান। মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে অসংখ্য শ্রমিকের। তোর্সার রুদ্রমূর্তি তলিয়ে নিয়ে গেছে কালচিনির সুভাষিণী চা বাগান সংলগ্ন প্রায় ৫০০ মিটার বাধঁ। নদী ভাঙনের ফলে তলিয়ে গেছে প্রায় ৭৫ মিটার চা বাগান। অন্য়দিকে, ডলোমাইট এবং পলি মিশ্রিত জল প্রায় ৯০ হেক্টর চা বাগান নষ্ট করেছে। উপড়ে ফেলে দিয়েছে হাজার হাজার ছাওয়া গাছ। বাগান কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা হতে পারে। তাঁদের চিন্তা, ডলোমাইট মিশ্রিত জমিতে আর কখনও চাষ হবে না। সব মিলিয়ে, পাহাড় জুড়ে এখন শুধু অন্ন, আশ্রয় আর নিরাপত্তার হাহাকার। চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়ানো কি আদৌ সহজ হবে?