পার্থপ্রতিম ঘোষ, অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কলকাতা : সুর হারিয়েছে পথ। তবে সেই সুরলোকের সরণিগুলি বারেবারে মনে করিয়ে দেয় তাঁর কথা। বাংলার সঙ্গে যে হৃদয়ের সম্পর্ক...! তাই তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে গাওয়ার জন্য একটা পয়সা পর্যন্ত নেননি, সেই সময় মধ্যগগনে থাকা লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) ।  একবার সুরসম্রাজ্ঞী বলেছিলেন, হেমন্তদার (Hemant Kumar) গান শুনলেই মনে হয়, মন্দিরে বসে কোনও এক সাধু ভজন গাইছেন।



কলকাতায় এলে মেনকা সিনেমার কাছে, ৬ নম্বর শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউ-এ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে উঠতেন লতা। এই বাড়িতেই দাদার সঙ্গে আড্ডা দিতেন। তৈরি হত কালজয়ী সুর। বাংলা ভাষা এতটাই প্রিয় ছিল তাঁর যে রেখেছিলেন গৃহশিক্ষকও। কলকাতায় তিনি আসলে বহু স্বর্ণালী সময় কাটত যে বাড়িতে, সেই জায়গাটা আর আগের মতো নেই। কিন্তু রয়ে গিয়েছেন তিনি। 


লতা মঙ্গেশকর, থেকে মান্না দে, কিশোর কুমার--- শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউর এক বাড়িতে কত গুণীজনই না আসতেন। তবে এখন সেই বাড়ির হাতবদল হয়েছে। বাড়ির মালিক স্মৃতিটুকু বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রতিবেশী অরিন্দম ভট্টাচার্য জানালেন,  এই বাড়িতে আসতেন শিল্পীরা। গানের আড্ডা হত। সেইসব স্মৃতি আর্কাইভ করা হয়েছে ১০ বছর ধরে। আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে।

আরও পড়ুন:


চলে গেলেন লতা, কলকাতায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে এবার শুধুই স্মৃতিদের আনাগোনা



সেই আকাশেই পাড়ি দিয়ে অনেক দূরে চলে গেলেন সুরসম্রাজ্ঞী। আর গাইবে না নাইটিঙ্গেল। শরৎ চ্যাটার্জি অ্যাভিনিউ থেকে কিছুটা দূরে কেয়াতলা। এখানেও ছিলেন এক সুরসাধক। কালজয়ী শিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে আসতেন লতা মঙ্গেশকর। গত শতাব্দীর পাঁচের দশক।  কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এসেছেন লতা। একই অনুষ্ঠানে গাইবেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ও। সেখানেই আলাপ হয় দুই সঙ্গীতজ্ঞের। কেমন ছিল সেই সাক্ষাৎপর্ব? স্মৃতি রোমন্থনে সতীনাথের পুত্রবধূ।


আর সেই সম্পর্কের রেশ ধরেই লতাকে দিয়ে বাংলায় গান গাওয়ালেন সতীনাথ। ১৯৫৬ সাল। বের হল লতা মঙ্গেশকরের প্রথম পুজোর অ্যালবাম। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে গাইলেন আকাশ প্রদীপ জ্বলে...। বাকিটা ইতিহাস...। সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের ( Satinath Mukherjee) পুত্রবধূ পারমিতা সেন জানালেন, কীভাবে একাগ্র মন নিয়ে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে গান রেকর্ড করেছিলেন লতা। 


সেই শুরু। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও দৃঢ় হয়েছে লতা-সতীনাথের সম্পর্ক। সতীনাথপত্নী উৎপলা সেনের সঙ্গেও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে লতার। কবেই সুরলোকে চলে গেছেন লতার দুই দাদা। সেখানেই হয়তো তৈরি হবে নতুন কথা, সুর।