সুনীত হালদার, হাওড়া: পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা। বাংলায় বিরামহীন সন্ত্রাসের অভিযোগ।  নির্বাচনের পঞ্চম দফায় হাওড়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে অশান্তির ছবি উঠে এসেছিল। সেই হাওড়ার পাঁচলায় এবার এক বেনজির দৃশ্য। হাওড়া লোকসভায় ভোট-পরবর্তী হিংসায় প্রায় ২০০ জন ঘরছাড়া বলে অভিযোগ। সোমবার ভোট-পর্ব মেটার পরেই পাঁচলা বিধানসভার বেলডুবি গ্রাম কার্যত পুরুষ শূন্য। 


বিজেপির অভিযোগ, ছাপ্পা ভোটে বাধা দেওয়ায় ভোটের দিন তাদের দুই পোলিং এজেন্টকে মারধর করা হয়। এরপর রাতে তাঁদের বাড়িতে দলবল নিয়ে চড়াও হন বেলডুবি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান। বেধড়ক মারধর করা হয় বিজেপি কর্মীদের। ভয়ে গ্রামছাড়া হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন বিজেপি কর্মী, সমর্থকরা। কার্যত মারধরের আতঙ্কেই বাড়ির পুরুষেরা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। অত্যাচারের অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে উঠলেও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।


পঞ্চম দফা ভোটে গত ২০ মে হাওড়া সদর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিন পাঁচলা বেলডুবি উত্তরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯ এবং ৭০ নম্বর বুথে দুপুর তিনটে নাগাদ গন্ডগোল হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন ওই বুথের বিজেপির দুজন এজেন্ট তৃণমূল কংগ্রেসের ছাপ্পা ভোটের প্রতিবাদ করায় তাদের বুথের মধ্যেই বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী জওয়ানরা তাদের সরিয়ে দেয়। এমনকি রাস্তায় বের হলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। 


এই ঘটনার পর বেলডুবি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শেখ রুহুল আমিন এবং তার দলবল বিজেপি সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হয়ে পুরুষদের বেধড়ক মারধর এবং ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। এমনকি রাতেও এলাকায় বেশ কয়েকটি বোমা পড়ে। আতঙ্কে ওইসব পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এলাকা ছাড়া হয়ে যায়। তারা এই মুহূর্তে কাছেই জঙ্গলের মধ্যে রয়েছেন। ঘরে ফিরতে পারছেন না। 


আরও পড়ুন, 'দুই দফায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন দেব', ডায়েরির পাতা পোস্ট করে দাবি শুভেন্দুর


বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ তৃণমূলের ভোট রিগিং এ বাধা দেওয়ায় তাদের মারধর করা হয়। পুলিশকে বলা হলে উল্টে পুলিশ তাদের বাড়িতে এসে চড়াও হয় এবং মারধোর করে বলেই জানান হয়েছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে তারা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন এবং প্রায় অভুক্ত অবস্থায় তাদের দিন কাটছে, এমনটাই জানান হয়েছে। 


মহিলা বিজেপি কর্মীদের আরও অভিযোগ তৃণমূল কর্মীরা তাদের ওপর অত্যাচারের হুমকি দেয় এবং এলাকাকে সন্দেশখালি করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। তাদের যাবতীয় অভিযোগের তির বেলডুবি তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শেখ রুহুল আমিন ও স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক গুলশান মল্লিকের বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ ওই দুজনের অত্যাচারে তারা ঘরছাড়া। 


যদিও ওই ২ তৃণমূল নেতা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পঞ্চায়েত প্রধান বলেন বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে ভোটের দিনে বুথে ছোটখাটো গন্ডগোল হয়েছিল। পরে তা মিটে যায়। তবে বিজেপি কর্মীরা তার বাড়িতে রাতে ইট ছোড়ে। সেই কারণেই পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দেয়। তারা নিজেরাই জঙ্গলে আছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তৃণমূলের বিধায়ক গুলশান মল্লিক বলেন প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর লোকজন তাদের কর্মীদের মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। পাঁচলায় ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এখন বিজেপির কর্মীরা নাটক করছেন। তৃণমূলের নামে মিথ্যে অভিযোগ করছেন। তারাই পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির লোকেদের ওপর হামলা চালায়।