কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র রায়, কলকাতা : লোকসভা ভোটে রাজ্যজুড়ে ৭২টি সভা ও রোড শো করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে একবারের জন্যও সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে যাননি অভিষেক  বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পিছনেও কি নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব? কানাঘুঁষো রাজনীতির অলিন্দে। 


তিন প্রবীণ প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচারে নেই  অভিষেক


শনিবার লোকসভা ভোটের শেষ দফা। তার আগে বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে গিয়েছে প্রচার। তৃণমূল সূত্রে খবর, লোকসভা ভোটের প্রচারে সারা রাজ্য জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভা ও রোড শো করেছেন ১০৭টি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৭২। কিন্তু, প্রনিধানযোগ্য  বিষয় হল, তিনি কয়েকটি কেন্দ্রে সভা করেননি, যেখানে প্রার্থী দলের তিন হেভিওয়েট নেতা। তিন সাংসদ। দমদম, কলকাতা উত্তর, এবং শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রেই প্রচারে যাননি অভিষেক। এই কেন্দ্রগুলির প্রার্থী কে কে ? সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের তিন প্রবীণ নেতা। তিনজনই হেভিওয়েট। এলাকায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ। আর এখানেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, যেহেতু ভোট রাজনীতিতে বয়সের উর্ধ্বসীমা বেধে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, তাই কি এই তিন প্রবীণ প্রার্থীর হয়ে ভোট প্রচারে গেলেন না তিনি? 


অভিষেক নবীনদের পক্ষে বরাবর সওয়াল করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর দলে নবীন প্রবীণ ভারসাম্য রাখার কথা বলেছেন। গত বছরই যখনই দলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের অভিযোগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল, তখনই তা প্রশমিত করার জন্য মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন,  ' সৌগতদা মাঝে মাঝে বলেন, আমার তো বয়স হয়ে গেল! আরে কীসের বয়স! মানুষের মনের কি কোনও বয়স আছে? যাঁরা নতুন এসেছেন, পুরনোদের সম্মান দিয়ে মাথায় রাখবেন।' 


সেখানে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের যুক্তি, ' আমি দু’ মাস আড়াই মাস রাস্তায় ছিলাম, নবজোয়ার করেছি। আমার বয়স ছিল ৩৬। আমি পারব রাস্তায় থাকতে আড়াই মাস, আমার ৭০ বছর বয়স হলে? পারব না। এটা সত্যি কথা। এটা আপনাকে মানতে হবে।' 


সৌগত রায়ের বয়স এখন ৭৬। সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ৭৫।  কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৬৭ বছর।  তিন জনেরই প্রচারে পাওয়া গেল না  অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অতীত ঘেঁটে দেখলে দেখা যাবে,  অভিষেকের নেতৃত্বকে কার্যত চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এই তিনজনই, ঠারেঠোরে। যদিও অভিষেক বুঝিয়ে দিয়ে ছিলেন, তাতে তাঁর কিছু যায় আসে না। পরে অবশ্য অভিষেকের গুণগানই শোনা যায় এঁদের গলায়। 


এই বিতর্ক নিয়ে অবশ্য মাথাই ঘামাতে চায় না বিজেপি। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র  শমীক ভট্টাচার্যর যুক্তি, ' জ্যেঠু-ভাইপোদের গন্ডগোলে আমরা নেই। আমাদের বিধানসভাতে দল আছে, এসব নিয়ে ভাবব। ঐ জ্যেঠু কাকুর দ্বন্দ্বে আমরা নেই।' 


আর তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলছেন, ' না না আসলে, গোটা রাজ্য জুড়ে করতে হচ্ছে, শেষ দিকে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রচার আছে। তাই হয়ত হয়নি। তবে উত্তরের কর্মীরা সবাই চেয়েছিলেন অভিষেক যেন থাকুন। হয়ত ভোটের শেষে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে পারেনি।'


এখন দমদম, কলকাতা উত্তর এবং শ্রীরামপুর, এই তিন কেন্দ্রে শেষ হাসি কারা হাসবেন, তা জানা যাবে ৪ জুন। 


আরও পড়ুন: West Bengal Monsoon Update: পালাবে গরম! দেশে ঢুকল বর্ষা, বাংলা বৃষ্টি পাচ্ছে কবে? 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।