কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সোমনাথ মিত্র, কলকাতা:  সাগরদিঘিতে (Sagardighi) বড় ব্যবধানে হার এবং ত্রিপুরায় (Tripura) খাতা খুলতে না পারার পর মুখ খুললেন একের পর এক তৃণমূল নেতা (TMC)। মদন মিত্র (Madan Mitra) বললেন, দলকেও মাঝেমধ্যে সিটি- অ্যাঞ্জিওর এর মধ্যে আসতে হবে! না হলে বুঝবে কী করে, ঈশান কোণে কোথায় মেঘ জমে আছে। 


সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে, দিঘির ভোটে, জোটের সাগরের ঢেউ, জলোচ্ছ্বাস হয়ে আছড়ে পড়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। নতুন করে উজ্জীবিত বাম-কংগ্রেস শিবির। আর এসবেই কি উথালপাথাল শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও? এই প্রশ্ন উঠছে, কারণ, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে বাম-কংগ্রেস জোটের বিরাট জয়ের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন তৃণমূলের অনেক নেতা, বিধায়ক, সাংসদ। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবার গলাতেই দলের উদ্দেশে আত্মসমীক্ষার বার্তা। 


সাগরদিঘির হার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন মদন মিত্রও। তিনি বলেন, "তোমার যদি অসুখ হয়, তোমাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। দলকেও মাঝেমধ্যে সিটি-এনজিও এর মধ্যে আসতে হবে! না হলে বুঝবে কি করে, ঈশান কোণে কোথায় মেঘ জমে আছে! আর সেটা বুঝতে পারলাম না বলেই ৫০ হাজারে জেতা আসন ২৩ হাজারে হেরে গেলাম।" 


কোচবিহারের তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায় তো সাগরদিঘির ফলের সঙ্গে কার্যত ঊনিশের লোকসভা ভোটের তুলনা টেনেছেন! ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, সাগরদিঘি অশণি সঙ্কেত। আর সাগরদিঘির পোষ্ট মর্টেম প্রয়োজন। নীচু তলার সত্যিকারের আসল খবর উপরতলায় যাওয়া দরকার। সাগরদিঘি বোধহয় আমাদের ঊনিশের পর আরেকটি শিক্ষা।' তিনি এও বলেন, কোথাও একটা নিচুতলার খবর, উঁচু তলায় ঠিকভাবে পৌঁছচ্ছে না। সেই সমস্যা নিরসন হওয়া প্রয়োজন।


আর পড়ুন, নদীর তলা দিয়ে ছুটবে মেট্রো, ভারতে প্রথম পরিষেবা শুরু হতে পারে হাওড়া ও কলকাতার মধ্যে


ফেসবুকে ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করে তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারও লিখেছেন, সাগরদিঘিতে দলেরই মীরজাফর একাই সাইট গোল করেছে? দলের কিছু বড় মন্ত্রীর অপকর্মের কারণে, আমাদের লাল কার্ড দেখতে হয়েছে এবং মাঠের বাইরে আছে। অপরূপা পোদ্দার বলেন, দলে মীরজাফর রয়েছে, যারা বিজেপিকে ভিতর থেকে সাপোর্ট করছে। ফেস টাইমে শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, দল ঠিক সময় ব্যবস্থা নেবে। অপারেশন হবে।


এই আবহে সাগরদিঘির হার নিয়ে, দলকে রিপোর্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। সাগরদিঘির পাশাপাশি ত্রিপুরা থেকেও একেবারে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তৃণমূলকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে একাধিকবার প্রচারে গেছিলেন। কিন্তু, শেষমেশ ত্রিপুরায় নোটার থেকেও কম ভোট পেয়েছে তৃণমূল। 


এই প্রেক্ষাপটে ত্রিপুরা নিয়েও আত্মসমালোচনার সুর শোনা গেছে বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের গলায়। তিনি বলেন, 'ত্রিপুরার ফলাফল নৈরাশ্যজনক! কি হলো বোঝা যাচ্ছে না। অভিষেক তো দেখছিল ত্রিপুরা। আসলে ওখানে সংগঠন দুর্বল হয়ে গেছে। শক্তি ক্ষয় পূরণ করতে পারেনি।'


পঞ্চায়েত ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। তারপর রয়েছে লোকসভা ভোট। এই পরিস্থিতিতে সাগরদিঘির হারের পর, দলেরই নেতাদের আত্মসমালোচনা কি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে তৃণমূল?