আবির দত্ত, কলকাতা : উল্টো করে ঝুলিয়ে মার, ইলেকট্রিক শক! মহেশতলাকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে আনা হল কলকাতায়। শাহেনশাহ সহ আরও দুই অভিযুক্তকে কলকাতায় আনল পুলিশ। মুম্বই থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় আনা হল কারখানার মালিক শাহেনশাহকে। ঘটনা সামনে আসতেই মুম্বই পালায় শাহেনশাহ। মোবাইল চুরি করেছিল নাবালক, দাবি শাহেনশাহর। ধৃতেদর বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি, রয়েছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। গত ৩১ মে সকাল ৭টায় কারখানা থেকে পালায় নাবালক, দাবি ধৃতদের। যে দিক দিয়ে নাবালকের বেরনোর কথা বলেছে ধৃতরা, সেই রাস্তার সিসিটিভি পরীক্ষা করেছে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়নি নাবালককে, খবর পুলিশ সূত্র। ১০ দিন পার, এখনও খোঁজ মেলেনি নাবালকের। অন্যদিকে শাহেনশাহ এবং তার সঙ্গীদের দাবি, 'ফাঁসানো হচ্ছে। ছেলে, ছেলের বাবা ফাঁসাচ্ছে। ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে মারার জন্য পালিয়ে গিয়েছিলাম। মোবাইল চুরি করেছিল ও।' 

পরিবারের দেনা শোধ করতে গরমের ছুটিতে, মহেশতলার এই কারখানায় কাজ করতে আসে ক্লাস সেভেনের পড়ুয়া ওই নাবালক। সঙ্গে আসে তার দাদাও। এক মাস পেরনোর পর বেতনের দাবি করে তারা। অভিযোগ, এরপরই মোবাইল চুরির অপবাদে নাবালককে মারধর করে মালিক পক্ষ। তারপর থেকেই নিখোঁজ সে। এদিকে, মহেশতলার ওই কারখানার জমির মালিকের দাবি, গত ৩০ মে, নাবালকের খোঁজে তাঁর কাছে আসেন ধৃত কারখানার মালিক শাহেনশাহ। নাবালককে খুঁজতে যাওয়ার জন্য একটা বাইকও চাওয়া হয় তাঁর কাছে। নিখোঁজ হওয়ার আগে, ২ ব্যক্তির সঙ্গে কারখানার দিকে গিয়েছিল ওই নাবালক। কিন্তু, সেইদিক থেকে আর ফিরে আসতে দেখা যায়নি তাদের। তাঁরা কারা? অভিযুক্তদের কেউ ছিল তাদের মধ্যে? 

১০ দিন পার, এখনও নিখোঁজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলার কারখানায় কাজ করা নাবালক। নির্যাতনের অভিযোগে ধৃত ৩ জনকে ট্রানজিট রিমান্ডে মুম্বই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছে। রবীন্দ্রনগর থানায় ধৃতদের দফায় দফায় জেরা করছে পুলিশ। ধৃতদের বয়ানে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে। জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে, ৩১ তারিখ সকাল ৭টায় কারখানা থেকে বেরিয়ে যায় নাবালক। পুলিশ সূত্রে খবর, সেই সময় নির্দিষ্ট করে কারখানা ও তার আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে কিন্তু নাবালকের কোনও খোঁজ মেলেনি। আগের ২ জনের মতো এই ৩ জনকেও হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায় পুলিশ। আজ আদালতে পেশ করে সেই আবেদনই জানানো হবে পুলিশের তরফে। কোথায় গেল নাবালক, তার খোঁজে পুলিশের একটি দল রয়েছে ইসলামপুরে। এছাড়াও কারখানা চত্বরেও সরেজমিনে তদন্ত করছে পুলিশ। আজই আলিপুর আদালতে তোলা হবে ধৃতদের। শুরু হয়েছে কেস ডায়েরি তৈরির প্রক্রিয়া। 

আজ দুপুর ১২ নাগাদ ৩ জনকে আলিপুর তোলা হতে পারে। সূত্রের খবর, প্রাথমিক জেরায় শাহেনশাহ পুলিশকে জানিয়েছে, মোবাইল চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হয় নাবালককে। সেদিন রাতেই কারখানা থেকে পালিয়ে যায় নাবালক। বন্ধুর স্কুটার নিয়ে আশেপাশে নাবালকের খোঁজ করে ধৃত। কিন্তু তার খোঁজ মেলেনি। নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে ভয় পেয়ে মুম্বই পালায় তিনজন। মুম্বই থেকে গ্রেফতার করা হয় কারখানার মালিক ও মূল অভিযুক্ত শাহেনশাহ, তার ভাই ফিরোজ আলম ও শাগরেদ আমিরুল মহম্মদকে। নাবালকের উপর নৃশংস নির্যাতন চালানোর অভিযোগে মূল অভিযুক্ত সহ এখনও পর্যন্ত মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।