করুণাময় সিংহ ও অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে একের পর এক তৃণমূল নেতার নাম জড়াচ্ছে। ওই অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে জেলবন্দিও রয়েছেন অনেকে। এর মাঝেই রাজ্যজুড়ে নানা জেলা থেকে আবাস দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। আর অনেকক্ষেত্রেই আবাস দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এবার মালদহের রতুয়ার পঞ্চায়েত প্রধান-সহ বেশ কিছু তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ উঠল। হাজার দশেক টাকা কাটমানি দিয়েও ঘর না মেলার অভিযোগে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। যদিও অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল।
আবাস যোজনায় ঘর না মেলার কারণে রতুয়ায় তুঙ্গে ওঠে বিক্ষোভ। ঘটনাস্থল মালদার রতুয়া দু'নম্বর ব্লকের পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। পথ অবরোধ করা হয়। লরি আটকে চলে বিক্ষোভ। পুলিশ এলে তাদের সামনেই প্রতিবাদ জানাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি সামলাতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয় পুখুরিয়া থানার পুলিশকে।
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ:
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ শাসকদলের নেতারা আবাস যোজনায় নাম তোলার জন্য পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়েও আবাস প্রকল্পে ঘর মেলেনি। এখনও তাঁদের ভাঙাচোরা ঘরেই থাকতে হচ্ছে। এই অভিযোগে বুধবার বিক্ষোভ দেখানো হয়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা মিরজাতপুরে মালদা-রতুয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের মধ্যে একজন আলতাফ খান। তিনি বলেন, 'বাড়ির জন্য ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে টিএমসি পার্টি। ওদেরকে বলেছি, ৯ হাজার টাকা নিন। তাতে বলল, হবে না। টিএমসি পার্টির প্রধান সাহেব বললেন, ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। ১০ হাজার টাকা দিয়েছি টিএমসি পার্টিকে। এখনও পর্যন্ত ৫-৬টা ডেট নিল। বাড়ির কোনও ছবি হয়নি। বাড়ির কোনও পাত্তা নাই।' গ্রামবাসীদের অভিযোগ উড়িয়ে বিরোধীদের দুষেছেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান। পরাণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জসমিন বিবি বলেন, 'কে বা কারা আমাদের দলের নাম করে টাকা নিয়েছে, আমাদের জানা নেই। ভোট চলে এসেছে, বিরোধীরা ভোটের জন্য উসকাচ্ছে। পাবলিককে খ্যাপানোর চেষ্টা। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারবে না। তৃণমূলের কোনও নেতা টাকা নেয়নি, কোনও মেম্বার টাকা নেয়নি। ওরা ভোটে বুঝে যাবে।'
রাজনৈতিক তরজা:
পঞ্চায়েত ভোটের আগে দুর্নীতির অভিযোগে আবাস-বিক্ষোভ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। পদ্মশিবিরের উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, 'শুধু পরাণপুর নয়, গোটা উত্তর মালদাতেই যেখানে তৃণমূলের পঞ্চায়েত, সব জায়গায় কাটমানি নিয়েছে। ১০, ১৫, ২০ হাজার, যা পারে নিয়েছে। গ্রামবাসীদের প্রতি আমাদের সমর্থন আছে।' মালদা তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু বলেন, 'বিজেপির অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় দল এসে তদন্ত করেছে। বাংলাকে ক্লিনচিট দিয়েছে। বলেছে পদ্ধতিগত ভুল হয়েছে। কোনও দুর্নীতি পায়নি। কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে সার্টিফিকেট দিচ্ছে, বিজেপির এই অসত্য কথার কোনও মানে হয় না।'
আরও পড়ুন: 'কোটির খেলা' জানেন 'কোঠারি'?, গ্রেফতার হয়ে চোখে জল অনুব্রতর চার্টার্ড অ্য়াকাউন্ট্যান্টে