করুণাময় সিংহ, মালদা: নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। এমন কারণ দেখিয়ে বোর্ড গঠন (Panchayat Board) প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন। মালদার হবিবপুর ও হরিশ্চন্দ্রপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে এমনই সিদ্ধান্ত প্রশাসনের। বিরোধীদের অভিযোগ, এই দুই পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের (TMC) হাতছাড়া হতে পারে, সেই কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে শাসক দল। 


বোর্ড গঠন ঘিরে মালদা জেলা প্রশাসনের নির্দেশিকায় শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। মালদা দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুরি বলেন, 'তৃণমূল এখানে বিরোধী শূন্য় রাজনীতি করতে চাইছে। তৃণমূল চাইছে এখানে যে ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে তার মধ্যে একটাও যেন তৃণমূল ছাড়া অন্য় কেউ না পায়।' এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন মালদা তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহমান বক্সী। তাঁর দাবি, 'এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ।'


১৪ আগস্ট মালদার ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের জন্য় এর আগে নোটিস জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু রবিবার আচমকা হবিবপুর ও হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তার অভাবের কথা বলে স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেওয়া হয়। 


বিরোধীদের দাবি, মালদার ১৫টি পঞ্চায়েত (Panchayat) সমিতির মধ্যে ১০টিতে তৃণমূলের বোর্ড গঠন কার্যত নিশ্চিত। আরও দুটি পঞ্চায়েত সমিতিতেও শাসদলের বোর্ড গঠনের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। একটি পঞ্চায়েত সমিতি বর্তমানে ত্রিশঙ্কু রয়েছে। আর বাকি দুটি পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গড়ার মতো জায়গায় রয়েছে বিরোধীরা। অভিযোগ, সেই হবিবপুর ও হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন প্রক্রিয়াতেই স্থগিতাদেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। 


কোন দল কোথায়:
হবিবপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ৩৩। ১৭টি আসন জিতে এই পঞ্চায়েত সমিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল বিজেপি। তৃণমূল পেয়েছে ১৩টি। সিপিএমের দখলে ২টি এবং কংগ্রেসের ১টি আসন দখল করেছে। কিন্তু ভুয়ো জাতি শংসাপত্র দেওয়ার অভিযোগে ১ জনের সদস্য়পদ বাতিল হওয়ায় বিজেপির আসন সংখ্যা কমে বর্তমানে ১৬ হয়েছে।


হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ২১টি। এখানে তৃণমূল পেয়েছে ১০টি। কংগ্রেস ৮টি এবং সিপিএম ৩টি আসন পেয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোট গড়ে ত্রিশঙ্কু এই পঞ্চায়েত সমিতি দখল করবে বলেই পরিকল্পনা রয়েছে।


মালদা কংগ্রেসের সহ সভপতি ভূপেন্দ্রনাথ হালদারের দাবি, 'যেখানে যেখানে দেখছে শাসক দল বোর্ড গঠন করতে পারবে না। যেখানে বিরোধীদের বোর্ড গঠন করার একটা সুযোগ রয়েছে সেখানে এই ভাবে বন্ধ করার একটা প্রক্রিয়া নিয়েছেন। আগামীদিনে জোর করে যাতে বোর্ড গঠন করা যায় তাই তারা করবেন। এটা তৃণমূল কংগ্রেসকে একটা সুযোগ দেওয়া। ফোর্স নেই, এটা একটা অজুহাত।' এই ঘটনায় আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, বিজেপি জয়ী সদস্য ও তাঁদের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।


মালদা তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহমান বক্সি বলেন, 'প্রশাসন সন্দেহ প্রকাশ করছেন নিরাপত্তার অভাব হতে পারে। তাই হয় তো এই সিদ্ধান্ত। এখানে কিন্তু কোনও রাজনীতিক মেরুকরণ নেই। আমাদের কোনও প্রয়োজন পড়ে না।'


আরও পড়ুন: যাদবপুর পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উত্তেজনা, স্লোগানে সরব AISA