করুণাময় সিংহ, মালদা: দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন প্রধানের বিরুদ্ধে (Corruption Allegations)। সেই নিয়ে মামলাও চলছিল আদালতে। সেই আবহেই রহস্যমৃত্যু অভিযোগকারী ব্যক্তির।  তাঁর ক্ষত-বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ করাতেই তাঁকে প্রাণ দিয়ে খেসারত দিতে হল বলে মনে করছেন ওই ব্যক্তির পরিবার। ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁদের। 


মালদার গাজোলে এক ব্যক্তির ক্ষত-বিক্ষত দেহ উদ্ধার


মালদা (Malda News) জেলার গাজোল (Gazole News) ব্লকের বৈরগাছি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত খোসলা বাড়ি গ্রামের ঘটনা। ৫০ বছর বয়সি ধনঞ্জয় সরকার নামের এক ব্যক্তির ক্ষত-বিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়েছে। বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরের একটি আমবাগান থেকে তাঁর ক্ষত-বিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে ঘিরে প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। 


মৃত ধনঞ্জয়ের পরিবারের দাবি, প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানানোরই খেসারত দিতে হল তাঁকে। ধনঞ্জয়কে খুন করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর পরিবারের লোকজনের। যদিও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত গাজোল বৈরগাছি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুবোধ সরকার এই ঘটনায় তাঁর কোনও রকম ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। 


এলাকাবাসীর দাবি, প্রধান সুবোধের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন ধনঞ্জয়, তাঁর ভাই এবং আরও বেশ কয়েক জন। তার পর থেকেই প্রধান ধনঞ্জয়কে নানা ভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে, কালীপুজোর মেলায় ধনঞ্জয়ের সঙ্গে ঝামেলা বাধে সুবোধের। তার পরই গভীর রাতে খুনের ঘটনা ঘটে। 


আরও পড়ুন: Canning : প্রাণহানির আশঙ্কাপ্রকাশ করেছিলেন তৃণমূল বিধায়ক ! গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত


ধনঞ্জয়ের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মেলা থেকে বাড়ি ফেরার সময় আমবাগানে ধনঞ্জয়কে খুন করে দুষ্কৃতীরা। তাঁদের তরফে ইতিমধ্যেই গাজোল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যে বা যাঁরা এই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, পুলিশকে তাঁদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে বলে দাবি তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 


এ দিকে, ঘটনার তদন্তে নেমে গাজোল থানার আইসি রণবীরকুমার বাগ ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পুলিশের কাছে প্রধানের দিকেই আঙুল তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তার জন্য শুক্রবার বিকেলে সুবোধকে ডেকে পাঠিয়ে থানায় জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তবে ধনঞ্জয়ের বক্তব্য, "আমি এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছি। ধনঞ্জয় এবং কয়েক জন ১০০ দিনের কাজ নিয়ে আমার নামে কিছু অভিযোগ করেছিলেন। তা নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলছে। কালীপুজোর দু'দিন পর এলাকায় যাত্রাগান, মেলা হচ্ছিল এবং আমাদের মধ্যে সামান্য বচসা হয়েছিল ঠিকই। তবে এই খুনের ঘটনায় আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমিও চাই পুলিশ তদন্ত করুক বিষয়টি। এই ঘটনায় কে বা কারা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ।"


তৃণমূল প্রধানকে কাঠগড়ায় তুলছে মৃতের পরিবার, অভিযোগ অস্বীকার প্রধানের


তবে এই ঘটনায় রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্ম বলেন, "তৃণমূল সব ক্ষেত্রেই লুঠপাট করে। আর যাঁরা এই লুঠের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে খুন করা হচ্ছে। আমরা চাই, পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে সঠিক তথ্য তুলে ধরুক। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সকলের গ্রেফতারির দাবি জানাই।" এ নিয়ে রাজ্য তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, "একটি মর্মান্তিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। তাতে পুলিশের কাছে নাম এসেছে অনেকেরই। আমরা চাই, পুলিশ তদন্ত করুক। গ্রেফতার করুক দোষীদের।" অপরাধী যে দলেরই হোক, কড়া শাস্তি হওয়া উচিত বলে মত কৃষ্ণেন্দুর।