মালদা: মালদার স্কুলে বন্দুকবাজের হামলা, অল্পে রক্ষা পড়ুয়াদের। সেই সময়কার হাড়হিম করা অভিজ্ঞতা শোনালেন মালদার (Malda) স্কুলের শিক্ষক।


শিক্ষিকা বলেন, 'হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েই ঢুকেছিল বন্দুকবাজ। তখন আমি মাস্টারমশাইকে ইশারায় বললাম ওপরে খবর দিন। আমি বন্দুকবাজকে বললাম ছেলের এরকম হয়েছে, এখানে কেন এসেছেন, প্রশাসনকে জানান। তখন বন্দুকবাজ বলে পুলিশকে ঢুকতে দেবেন না। পুলিশকে খবর দিলে বোমা বাস্ট হবে। বোমা বিস্ফোরণ হবে। মানববোমা আমার কাছে আছে, আমি তো মরবোই কিন্তু এই ক্লাসকে ছাড়ব না। তারপর কথা বলতে বলতে বন্দুকবাজের পাশ কাটিয়ে ওপরে চলে যাই। তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়, কিছু বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ৭১ জন পড়ুয়া কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। কিছু বাচ্চা বাথরুমে গিয়েছিল, বন্দুকবাজ বারবার বলছিল বাচ্চাটিকে নিয়ে আসুন। সব বাচ্চারা যখন বুঝতে পেরেছিল। ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। ক্লাসের একেবারে কোণায় বসেছিল।  বাথরুমের জন্য বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া হবে ভাবা হয়েছিল। উনি কিন্তু নজর রাখছিলেন। একটু পরেই উনি বলেন আপনাদের একটা বাচ্চা বাথরুমে গিয়েছে, ওকে নিয়ে আসুন।'


কী বলছেন প্রধানশিক্ষক:
স্কুলে নিরাপত্তা বলতে মেনগেট লাগানো থাকে। ছোট গেট খোলা থাকে। অভিভাবকরা আসেন নানা কাজে। তাঁদের তো ঢুকতে দিতেই হয়। ওঁকে দেখে অভিভাবক বলেই মনে হয়েছিল। ওঁর সন্তান স্কুলে পড়ত বা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক।


মালদার ঘটনা ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্দুকবাজকে ক্লাস থেকেই আটক করলেন ডিএসপি। ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্দুকবাজকে পাকড়াও করেন তিনি। যেভাবে এই কাজটা করেছেন তাতে তিনিই এখন শিক্ষক-পড়ুয়া থেকে অভিভাবক- সবার চোখেই হিরো। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিসের অফিসার, মালদার ডিএসপি আজহারউদ্দিন খান জানিয়েছেন এটাই তাঁর কর্তব্য। তিনি বলেন, 'আমরা তো পুলিশ অফিসার। আমাদের এটা ডিউটি ছিল।' কীভাবে এই কাজ করেছেন সেটাও জানিয়েছেন তিনি। ডিএসপি বলেন, "আমাকে আমার এসপি স্যার বললেন এরকম একটা ঘটনা হচ্ছে। আমি তারপর আইসি-কে ফোন করলাম। আইসি কে ফোন করে সেখান থেকে বেরোলাম। আমরা ১০ মিনিট ড্রাইভ করে স্কুলটায় এলাম। এসে জানতে পারলাম ওইখানে এরকটি লোক অলমোস্ট ৭০ খানা বাচ্চাকে হোস্টেজ করে নিয়েছে। পুলিশের লোককে দেখলেই বলছে কেউ ঢুকবে না গুলি মেরে দেব।  আমাদের কোনও উপায় ছিল না। স্কুলের পিছনের দিকে একটা পাঁচিল আছে , সেখানে গিয়ে আমি একটি লোকের কাছ থেকে একটি টি শার্চ, চটি নি। এবং আমার ইউনিফর্মটা খুলে ফেলি। তারপর আমার বেল্টটা খুলি। একজন সিভিলিয়ন হিসাবে স্কুলে ঢুকি। আমার সঙ্গে এসআই দিলীপ হালদারকে নিয়ে ঢুকি। দিলীপ হালদারকে বলি আপনি এখানে থাকেন, আমি মিডিয়াম্যান সেজে যাচ্ছি। আমি মিডিয়াম্যান সেজে যাই, ওখানে দাঁড়িয়ে পড়ি। ও বুঝতে পারেনি আমি ডিএসপি (ডিএনটি) মালদা আছি। মোবাইলটা এমনভাবে সামনে রাখি ওর থেকে দূরে,ও যেন মনে করে ওরও রেকর্ডিং আমি মিডিয়াম্যান হিসাবে করছি। ফ্র্যাকশন অফ সেকেন্ডে আমি ঠিক করি আমাকে একটা টার্গেট নিতে হবে। এক দুই পা করে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। ঝাঁপানোর পর ওকে আমি ক্যাপচার করে নিতে পারি, তারপর পিছনে আমাকে ব্যাকআপ করে। আমি ধরতে পারি। তারপর বাচ্চাদের রেসকিউ করে বের করে দেওয়া হয়।" 


আরও পড়ুন: উত্তপ্ত কালিয়াগঞ্জ, পুর এলাকার ৪টি ওয়ার্ডে জারি ১৪৪ ধারা