করুণাময় সিংহ, হরিশচন্দ্রপুর: অভাবের সংসারে স্বপ্ন দেখাও মহার্ঘ। কিন্তু মনকে বেঁধে রাখতে পারেন ক'জন! মালদার রকিও পারেননি (Malda News)। দারিদ্র্যকে সঙ্গী করে বড় হলেও, জীবনে বড় মানুষ হওয়ার লক্ষ্য ছিল তাঁর। পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়ের দৌলতে সেই লক্ষ্য়পূরণে সফল হলেন তিনি। WBCS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জয়েন্ট বিডিও হতে চলেছেন। মালদা জেলায় তো বটেই, গোটা বাংলার কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ওই যুবক। (WBCS Exams)
মালদার হরিশচন্দ্রপুরের ১ নম্বর ব্লকের তুলসিহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাড়িয়াল গ্রামের বাসিন্দা রকি চন্দ্র দাস। বয়স ২৬ বছর। বাবা স্থানীয় হোটেলের সামান্য কর্মচারী। মা অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলে সহায়িকা হিসেবে কর্মরত। এক ছেলে, এক মেয়েকে নিয়ে বরাবরই অভাবের সংসার তাঁদের। সেই পরিস্থিতিতেই WBCS পরীক্ষয়ায় উত্তীর্ণ হয়ে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করলেন রকি।
গত ২০ জুলাই WBCS পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে 'সি' বিভাগে গোটা রাজ্যের মধ্যে ২৯তম স্থান অধিকার করেছেন রকি। তাঁর এই কৃতিত্বে মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনরা গর্ব অনুভব করছেন। গোট এলাকায় রকির এই কীর্তি ছড়িয়ে পড়েছে। দরিদ্র ঘরের সন্তান রকির এই সাফল্য়ে খুশি এলাকাবাসীও। কিন্তু এত আনন্দের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘশ্বাসের ছোঁয়াও। কী অসম্ভব লড়াই করতে হয়েছে ছেলেকে, তা ভেবে চলেছেন রকির মা-বাবা।
রকির বাবা পরাণচন্দ্র দাস হোটেলের কর্মচারী। মা অনু দাস অঙ্গনওয়াড়ির সহায়িকা। ছোট থেকেই সংসারে অর্থকষ্ট দেখেছেন রকি। তবে অর্থের অভাব থাকলেও, মেধার অভাব ছিল না রকির। ২০১২ সালে তুলসিহাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ২০১৪ সালে লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করেন উচ্চমাধ্যমিক। এর পর মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইংরেজি অনার্সে স্নাতন হন দ্বিতীয় বিভাগে।
বহরমপুরে একটি মেসে থেকেই WBCS-এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন রকি। টাকার অভাবে আলাদা করে কোচিং নিতে পারেননি তিনি। তবে মুর্শিদাবাদের জেলা স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকদের থেকে সাহায্য পান। মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগারে দেড় বছর ধরে নিখরচায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। সকালে-বিকেলে টিউশনও পড়াতেন, যাতে নিজের খরচটুকু জোগাড় করতে পারেন। তাতেও প্রথম দু'বার WBCS পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি রকি। তৃতীয় বারে যদিও সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
ছেলের লড়াইয়ের কথা উঠতে তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন পরাণ। গলায় ধরা পড়ে অপরাধবোধের সুর। সবরকম ভাবে চেষ্টা করলেও, ছেলের জন্য সে ভাবে কিছু করতে পারেননি বলে আক্ষেপ তাঁর। জানান, এক ছেলে, এক মেয়ে। দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হতো। বন্ধন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নিতে হয়েছে তাঁদের। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে অন্য রাজ্যেও কাজ করেছেন। কখনও কাজ করেছেন দিনমজুর হিসেবে। বর্তমানে তুলসিহাটায় একটি হোটেলে কাজ করেন। রকির সাফল্য আজ তাঁদের পরিবারকে আজ অন্ধকার থেকে আলোয় এনে ফেলেছে।