শিবাশিস মৌলিক, মালদা : এক কাপড়ে ভিটেমাটি ছেড়ে মালদার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয়। ঠিক কীভাবে নেমে এসেছিল দুর্বৃত্তদের আক্রমণ? সেদিনের কথা মনে করলেই এখনও তাঁদের চোখে মুখে সেই আতঙ্ক। ভয়ে চোখে জল। পাড়ার এই মানুষগুলোকেই ডাকতেন 'দাদা, কাকা, জ্যাঠা ' বলে। কিন্তু রাতারাতি কেমন বদলে গেল মানুষগুলো। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হল বাড়িতে। তাণ্ডব চালালো বাড়িতে। উনুনে ফুটছিল ভাত। পড়ে রইল। দোকানে বিড়ি বেঁধে তিল তিল করে জমানো টাকা, অল্প অল্প করে গড়িয়ে রাখা মেয়ের বিয়ের গয়না....আর কিচ্ছু নেই। গোছানো ঘর গেরস্থালি ফেলে তাঁদের ঠিকানা এখন ত্রাণ শিবির। কেউ বলতে পারছেন না, ফিরে যেতে পারবেন কবে। কীভাবেই বা দেবেন মেয়ের বিয়ে, ফিরে গেলেও আবার যে আক্রান্ত হবেন না, তাই বা বলতে পারে কী কেউ?
ওয়াকফ-অশান্তি ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠা মুর্শিদাবাদ থেকে রাতারাতি ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে বহু মানুষকে! নিজেভূমে পরবাসী! দুষ্কৃতীদের সীমাহীন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সামশেরগঞ্জ থানার বেতবনা গ্রাম থেকে নদী পেরিয়ে মালদার বৈষ্ণবনগরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। বৈষ্ণবনগরের পারলালপুর হাইস্কুলের ত্রাণশিবির। এখানে আশ্রয় নিয়েছেন সামশেরগঞ্জের বেদবনা গ্রামের প্রামাণিক পরিবার। এক পরিবারে ১৫ জন সদস্য। সকলেই এখন এই ত্রাণশিবিরে। ডুকরে উঠে বললেন, ভাত রান্নার সময় হামলা হয়েছিল...ওই অবস্থাতেই রান্না ফেলে ঘর ছেড়ে পালাতে হয়েছে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে।
৩ মেয়ে নিয়ে ৯ জনের সংসার বনবাসী মণ্ডলের। পেশায় বিড়ি শ্রমিক, মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো দেড় লক্ষ টাকার জিনিস লুঠ হয়ে গেছে! সেই কথা মনে করলেই কেঁদে ফেলছেন মাঝবয়সী এই মহিলা। মুর্শিদাবাদের বেতবনারই বাসিন্দা কালীচারণ প্রামাণিক, তৃপ্তি প্রামাণিকরা। প্রাণ বাঁচাতে মালদায় পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন স্কুলের ক্যাম্পে। তাঁদের বাড়িও ভাঙচুর হয়েছে! সোনাদানা সব শেষ!
ওয়াকফ-বিরোধী বিক্ষোভের নামে মুর্শিদাবাদে ভাঙচুর করা হয়েছে দোকান। লুঠপাট চালানো হয়েছে শপিং মলে। যার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা টেনেছেন শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে, তৃণমূলের মুখেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ। শাসক-বিরোধী বাগযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ, মনে করিয়ে দিয়েছে সেদেশের কিছুদিন আগের ছবি। সম্প্রতি গাজার উপর ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদের নামে সিলেটে কেএফসি-র বিপণীতে ঢুকে ভাঙচুর এবং সেখানকার খাবার লুঠ করে প্রতিবাদকারীরা। কিন্তু এ ছবি বাংলায় কেন? জবাব দেবে কে?