করুণাময় সিংহ, মালদা : ৬ বছর আগে ওড়িশার ঘটনা। কাকুতি-মিনতি করেছিলেন দানা মাজি। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি পাননি। বাধ্য হয়ে নিজের কাঁধেই স্ত্রীর দেহ নিয়ে হাঁটা লাগিয়েছিলেন অসহায় স্বামী। এই ভয়ঙ্কর ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশকে। 



কাট টু ২০২৩ । ঘটনাস্থল জলপাইগুড়ি। টাকা দিতে না পারায় 'অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মন গলেনি', বাধ্য় হয়ে মায়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হয়েছিল ছেলেকে। জলপাইগুড়ির এই ছবি দেখে শিউরে উঠেছিল রাজ্য়বাসী। 


বাংলায় ফের ওড়িশার কালাহান্ডি, জলপাইগুড়ির পর এবার মালদার বামনগোলা। ৫ কিলোমিটার রাস্তা বেহাল। তাই রোগিণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ ফিরিয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স, এমনকী টোটোও। ফলে খাটিয়ায় তুলে কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয় ১০ কিলোমিটার দূরে মোদিপুকুরের সরকারি হাসপাতালে। এরপর চিকিৎসক দেখে মৃত ঘোষণা করেন বামনগোলার মালডাঙা গ্রামের ২৪ বছরের গৃহবধূ মামণি রায়কে। 

শুক্রবার  এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পরিবার সূত্রে খবর, বুধবার জ্বর আসে গৃহবধূর। ২ দিন পর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। 

স্থানীয়দের দাবি, গোবিন্দপুর-মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এই এলাকায় পাকা রাস্তা চেয়ে বারবার পথ অবরোধ হয়েছে। তাতে কাজ হয়নি। বামনগোলার মালডাঙা থেকে আইগনতারা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তা এখনও মাটির। আর তার জন্যই কার্যত বিনা চিকিৎসায় বেঘোরে প্রাণ হারালেন তরুণী গৃহবধূ। প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।  


জলপাইগুড়ির ঘটনাটা যদিও ছিল কিছুটা অন্যরকম। কিন্তু ভয়াবহতা ছিল একইরকম। সেবার মায়ের দেহ শেষবারের মতো বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মেলেনি সরকারি হাসপাতালের শববাহী গাড়ি। বাইরে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি চেয়েছিল ৩ হাজার টাকা। কিন্তু পকেটে মাত্র বারোশো টাকা থাকায় যেতে রাজি হননি চালকরা। উপায় না পেয়ে, মায়ের নিথর দেহ কাঁধে তুলে নেন ছেলে। ছেলেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বাবা। ছেলে প্রশ্ন তুলেছিলেন,  ৯০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে মাকে হাসপাতালে এনেছিলেন। তাহলে কেন সেই রাস্তা যেতে ৩ হাজার টাকা দাবি করা হল? সেই ঘটনায়  জোরাল হয়েছিল অ্য়াম্বুল্য়ান্স-রাজেরঅভিযোগ! আর এবার বামনগোলার ঘটনায় অভিযোগের তির খারাপ রাস্তার দিকে। যা পাকা করার দাবি বারংবার করা হলেও, প্রশাসন ভ্রুক্ষেপ করেনি বলে দাবি স্থানীয়দের । 

 এদিকে , রোগিণীকে কাঁধে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ঘিরে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপির অভিযোগ, গতবার গোবিন্দপুর-মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত তাদের দখলে থাকলেও, যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছে তৃণমূল। বিধায়ক ও সাংসদ বিজেপির হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের তহবিলের টাকা নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছে শাসকদল, অভিযোগ বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী বীণা সরকার কীর্তনিয়ার। তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


https://whatsapp.com/channel/0029VaCBCh6545uwkeNBg11y