করুণাময় সিংহ ও অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা এবং জলপাইগুড়ি: আচমকা ঝড়বৃষ্টিতে মালদায় বাজ পড়ে মৃত্যু হল ১১ জনের। জখম হয়েছে আরও দুজন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মালদার বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় বাজ পড়ে মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে। মৃতদের মধ্যে দুজন স্কুলছাত্র রয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। মৃত ১১ জনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি পুরাতন মালদহ থানার সাহাপুর এলাকায়। অপর দুজনের বাড়ি গাজোল থানার আদিনা এবং রতুয়া থানার বালুপুর এলাকায়। বাকিদের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর এবং ইংরেজ বাজার থানায় এলাকায়। মৃতদেহগুলি মালদহ মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য আনার ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৃতদের পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মুর্শিদাবাদ ও জলপাইগুড়িতেও একজন করে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
মালদায় বজ়্পাতের ফলে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় টুইট করে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি প্রশাসন সবরকম সাহায্য করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,মৃতদের নাম চন্দন সাহানি (৪০), রাজ মৃধা (১৬), মনোজিৎ মন্ডল (২১),অসিত সাহা (১৯) সুমিত্রা মন্ডল (৪৬),পঙ্কজ মণ্ডল (২৩),নয়ন রায় (২৩), প্রিয়ঙ্কা সিংহ রায় (২০) রানা শেখ (৮), অতুল মণ্ডল (৬৫) এবং সাবরুল শেখ (১১)।
মৃতদের মধ্যে প্রথম তিনজনের বাড়ি পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর এলাকায়। অন্য দুজনের বাড়ি গাজোল থানার আদিনা এবং রতুয়া থানার বালুপুর এলাকায়।
এছাড়াও হরিশ্চন্দ্রপুরের নয়ন রায় ও প্রিয়ঙ্কা রায় নামে এক দম্পতি জমিতে পাটের চাষ করার সময় বাজ পড়ে মারা গেছে। মৃতদের মধ্যে ৮ এবং ১১ বছর বয়সী দুজন নাবালকও রয়েছে। তাদের বাড়ি মানিকচক থানার হাড্ডাটোলা এলাকায়।
অপর মৃতদের বাড়ি ইংরেজবাজার এবং মানিকচক থানা এলাকায়। বাজ পড়ে আহত হয়েছেন ফাতেমা বিবি (৩৫) এবং দুলু মণ্ডল (৪৫)। এদের বাড়ি ইংরেজবাজার থানার বুধিয়া এলাকায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৃত অসিত সাহা এবং রাজ মৃধা দুজনেই দশম এবং একাদশ শ্রেণীর ছাত্র।
পুরাতন মালদার সাহাপুর এলাকার মৃত মনোজিৎ মণ্ডলের দাদা সঞ্জীব মণ্ডল জানিয়েছেন,বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর ভাই সহ তিনজন ভাটরা এলাকার ধানের জমিতে কাজ করছিল। বৃষ্টির জন্য একটি গাছের তলায় আশ্রয় নেয় ওরা। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে আচমকা বাজ পড়লে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তাঁর ভাই সহ তিনজনের। অন্যদিকে গাজোলের আদিনা এলাকায় আম বাগান দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বাজ পড়ে মৃত্যু হয়েছে একাদশ শ্রেণির স্কুল পড়ুয়া অসিত সাহার।
অন্যদিকে একইভাবে জমিতে ধান কাটার সময় আচমকা বাজ পড়ে মৃত্যু হয় রতুয়া থানার বালুপুর এলাকার গৃহবধূ সুমিত্রা মণ্ডলের। তাঁর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেল কলেজের মর্গে আনার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
মালদার জেলাশাসক নিতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারপিছু দু লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমস্ত রকম সরকারি সাহায্য প্রদান করা হবে।
মালদার পাশাপাশি বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়ি এবং মুর্শিদাবাদেও। জখম হয়েছে আরও তিনজন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চড়া রোদের পর সন্ধ্যার একটু আগে ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি হয় গুরদং ঝোড়া চা বাগানে। সেই সময় মাঠে ছাগল চড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলেন রাঙামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের গুরজং ঝোড়া চা বাগানের মন্দির লাইনের বাসিন্দা বিষ্ণু নায়েক। আচমকা বাজ পড়ে মাঠে লুটিয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
মুর্শিদাবাদের পাঁচগ্রামেও বজ্রপাতের জেরে মৃত্যু হয়েছে একজনের। জখম হয়েছেন তিনজন। মৃতের নাম শ্রীমন্ত ঘোষ।
আরও পড়ুন: West Bengal Weather: সপ্তাহের শেষেই তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা! বাংলায় ফের ফিরছে গরমের থাবা
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।