অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: আরজি কর কাণ্ডের আবহে তোলপাড় রাজ্য, প্রতিবাদ-আন্দোলন চলছে দেশেও। তার মধ্যেই ফের রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে হিংসার ঘটনা। এবারও হিংসার শিকার চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা। হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে রাতের ডিউটিতে কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্সকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল। যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা। ওই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত। বিরোধীদের কটাক্ষ, আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মন্ত্রীর নেতৃত্বে যে মিছিল হয়েছিল তৃণমূলের তরফে, তাতে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল ওই নেতাকেও।
হাসপাতালের মধ্যেই হামলা:
আরজি কর কাণ্ডের পরে হাসপাতালে নাইট ডিউটি এবং কর্মরত মহিলা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা চালু করা হয়েছে। বারবার করে উঠে আসছে নিরাপত্তার প্রসঙ্গ। সেই সময়েই মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে দেখা গেল একেবারে উল্টো ছবি। মঙ্গলবার রাত্রি ১১টা নাগাদ হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নার্সিং স্টেশনে ঢুকে হঠাৎ কর্তব্যরত নার্সদের দিকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় অভিযোগের তীর অভিনাশ দাস নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার দিকে। এই ঘটনা ঘটতেই তার প্রতিবাদ করেন সেখানে উপস্থিত মেডিকেল অফিসার প্রভাকর সাহা। প্রতিবাদ করতেই ওই তৃণমূল নেতার রোষ তাঁর উপর গিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পাশাপাশি, নার্সদের খুনের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাটি আরও বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই হাসপাতালে উপস্থিত চিকিৎসক এবং বাকি কর্মীরা ওই ব্যক্তিকে আটকে দেন। তারপরেই খবর দেওয়া হয় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায়। ঘটনার খবর পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঙ্গে বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেন। এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নেই। আতঙ্কে রয়েছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের পক্ষ থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
কেন এমন হামলা?
কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রভাকর সাহা বলেন, 'অভিযুক্ত ব্যক্তি এক রোগীর খোঁজ করতে এসে আমার সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। উপস্থিত নার্সদেরকেও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর করা হয়। এরপর সেখানে উপস্থিত নার্সদেরকেও তিনি মারতে যান। আমরা তাতে বাধা দি। এরপরই ওই ব্যক্তি আমাদেরকে খুনের হুমকি দেয়।'
প্রসঙ্গত অভিনাশ দাস নামে ওই তৃণমূল নেতাকে হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী এবং হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীন হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তাজমুল হোসেনের সঙ্গে আরজিকর-এর ঘটনার প্রতিবাদ মিছিলে এক সঙ্গে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। আর ওই বিষয়টি নিয়েই হয়েছেন এলাকার বিরোধীরাও। তাঁদের দাবি, এলাকায় শাসক দলের এমন লোকের পিছনে দলেরই মন্ত্রীর হাত রয়েছে। অবিলম্বে ওই নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন এলাকার বিরোধীরা।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানের আটক হওয়া সমর্থকদের ছাড়াতে রাতেই লালবাজারে কল্যাণ চৌবে