করুণাময় সিংহ, অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: সংসার বিমুখ জামাই দীর্ঘ দিন ধরে নিরুদ্দেশ (Superstitions)। হাজার চেষ্টা-চরিত্র করেও সংসারে ফেরানো যায়নি তাঁকে। শেষ মেশ তাই গুণিনের দ্বারস্থ হন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। মন্ত্র পড়ে, তুকতাক করে, যেন তেন প্রকারে জামাইকে সংসারে ফেরানোই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু তা করতে গিয়ে মালদায় (Malda News) এলাকাবাসীর রোষে পড়লেন দুই মহিলা (Mob Lynching)। একজোট হয়ে তাঁদের গণধোলাই দিলেন গ্রামের লোকজন।


মন্ত্র পড়ে, তুকতাক করে, যেন তেন প্রকারে জামাইকে সংসারে ফেরানোই ছিল উদ্দেশ্য!


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই তুকতাক চলছিল। গুণিনের নিদান মেনে তিনমাথা মোড়ে রোজ লাল কাপড়, জবা ফুল ফেলতেন ওই মহিলারা। কখনও আবার কাগজে মোড়া পান, সুপারি ফেলার পাশাপাশি, জ্বালানো হতো ধূপকাঠিও। তাতে নাকি পাড়ায় একের পর এক অঘটন ঘটে চলছিল।


ঠিক কে বা কারা এই কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছেন রোজ রোজ, তা জানতে সম্প্রতি ফাঁদ পাতেন গ্রামের মানুষ জন। তাতে শুক্রবার রাতে ওই দুই মহিলাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন পাড়া-প্রতিবেশীরা। সকলের ক্ষোভের মুখে পড়েন ওই দুই মহিলা। তাঁদের ধরে গণধোলাই দেন গ্রামবাসীরা। উড়ে আসতে থাকে কিল, চড়, ঘুষি।


ঘটনাটি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে কোনও রকমে ওই দুই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়।


আরও পড়ুন: Raidighi Boat Capsized: ৩৫০ ধানের বস্তা নিয়ে রওনা, রায়দিঘিতে নদীতে উল্টে গেল নৌকা


পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই মহিলার নাম ঝুমা দাস এবং অঞ্জলি দাস। বয়স যথাক্রমে ৪৫ এবং ৪৪ বছর। দু’জনে সম্পর্কে বোন। ঝুমার মেয়ে সীমা দাসের বিয়ে হয় কয়েক বছর আগে। তাঁর এক নাবালিকা কন্যাও রয়েছে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই সীমার। বিবাহবিচ্ছেদের কথা বলে নাকি সীমার স্বামী খোকন দাস ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে চলে যান, তার পর সেখান থেকেও নিরুদ্দেশ হয় যান।


সেই জামাইকে সংসারে ফেরাতেই ঝুমা এবং অঞ্জলি গুণিন এবং ওঝার দ্বারস্থ হন বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, সুজাপুর এলাকার এক গুণিন নিদান দেন যে, প্রতিদিন নিয়ম করে তিনমাথা মোড়ে, অন্ধকার রাতে রেখে ওই সব জিনিস রাখতে হবে। তাহলেই নাকি জামাই ঘরে ফিরবে! কুসংস্কার থেকেই গুণিনের নিদান মেনে ওই দুই মহিলা চলতে থাকেন। কখনও লাল কাপড়, কখনও জবা ফুল, মিষ্টি, কাপড়ে মোড়া সুপারি, কখনও আবার ধূপকাঠি জ্বালিয়ে রেখে আসেন।


তবে এলাকার বাসিন্দাদের বিশ্বাস, তিন মাথার মোড়ে মন্ত্রঃপুত সামগ্রী ফেলাতেই পাড়াতেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। কখনও কেউ দুর্ঘটনায় পড়ছেন রাস্তায়, কেউ আবার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কারা এই কাণ্ড ঘটাচ্ছেন, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন তক্কে তক্কে ছিলেন তাঁরা। শেষ মেশ শুক্রবার দু’জনকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন।


বাসিন্দাদের বিশ্বাস, তিন মাথার মোড়ে মন্ত্রঃপুত সামগ্রী ফেলাতেই পাড়াতেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে 


স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই দুই মহিলা অন্য এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের পাড়ায় সম্প্রতি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ওঠেন। জামাইকে ফিরে পেতেই তাঁরা এমন কাজ করছিলেন বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা। পুলিশ জানিয়েছে, কুসংস্কারের বশবর্তী হয়েই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন ওই দুই মহিলা। তাঁদের আটক করা হয়েছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ পেলে গুণিনেরও খোঁজ করা হবে বলে জানিয়েছে। প্রয়োজনে গ্রেফতারও করা হবে তাঁকে।  কিন্তু ওই দুই মহিলা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে এ সব ঘটালেও, দুর্ঘটনার জন্য তাঁদের দায়ী করে গণপিটুনি দেওয়া আদৌ যুক্তিসঙ্গত কিনা, রয়ে যাচ্ছে সেই প্রশ্নও।