করুণাময় সিংহ, মালদা: বাংলায় কাজ নেই বলেই কি ভিনরাজ্যের দিকে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে? সেইজন্যই কি বাংলায় পরিযায়ী শ্রমিকের বাড় বাড়ন্ত? মিজোরামে নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে মালদার ২৩ পরিযায়ী শ্রমিকের (Migrant Workers) মৃত্যুর ঘটনায় শুরু তরজা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। পাল্টা উত্তর দিয়েছে শাসকদল।


মিজোরামে নির্মীয়মাণ রেল সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে মালদার ২৩ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। আর তারপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে, কেন ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে যেতে হয় বাংলার শ্রমিকদের? তাহলে কি বাংলায় কর্মসংস্থান নেই? আর এইসব প্রশ্নকে সামনে রেখেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কাঠগড়ায় তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। রতুয়ার যে চৌদুয়ার গ্রামে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, ঠিক তার পাশের গ্রামই হল ইংরেজবাজারের নাগরাই।


স্থানীয়দের দাবি, এই গ্রামে মোট ৮০০টি পরিবার রয়েছে। প্রায় প্রত্যেক পরিবারেরই দু-একজন করে সদস্য বর্তমানে ভিনরাজ্যে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরল, গুজরাত, কর্ণাটক তো আছেই, পেটের টানে অনেকে গিয়েছেন রাজস্থান, মণিপুর, মিজোরামের মতো রাজ্যেও। নাগরাই গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাদেক বলেন, “সংসার চালাতে গেলে তো যেতেই হবে। যা কাজ পাই, তাই গিয়ে করি টাকার জন্য। মহিলা আর বয়স্ক মানুষরা গ্রামে থাকে।’’ শেখ সাদেকের মতোই গুজরাতে কাজ করতে গিয়েছিলেন ২২ বছরের শেখ মানিক।মাস তিনেক আগে, দুর্ঘটনার জেরে পড়ে গিয়ে বর্তমানে শয্যাশায়ী তিনি। শেখ মানিক বলেন, “এখানে তো কাজ নেই। কলকারখানা নেই। ১০০ দিনের কাজ নেই। সংসার কী করে চলবে। এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্য পাইনি।’’


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “শুধু মালদা নয়। মালদা মুর্শিদাবাদ সব জায়গাতেই আজ পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়। তারা কাজের প্রয়োজনে যেমন বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও চলে যাচ্ছে।’’ মৃতদেহ পৌঁছে দেওয়ার নেপথ্যেও রাজনীতি, অভিযোগ বিজেপির। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “আইজল থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সে পাঠানো হয়েছিল মৃতদেহ, সেগুলি এখানে এনে মালদা মেডিক্যালে এনে ডিএম এবং সুপার নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি নিয়ে গেছে।’’ ভোট আসবে। ভোট যাবে। তার আগে রাজনৈতিক তরজাও বাড়বে।কিন্তু কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে যাওয়া ও কফিনবন্দি হয়ে গ্রামের ফেরার এই দৃশ্য আর কতদিন দেখতে হবে?


আরও পড়ুন: Bankura Weather: বাঁকুড়ার উপরে মৌসুমী অক্ষরেখা, প্রবল বৃষ্টি দুর্যোগ লাল-মাটির দেশে