অভিজিৎ চৌধুরী, করুণাময় সিংহ, মালদা : রাজার প্রচলিত রীতি মেনে মালদার চাঁচলের মালতিপুরে ( Malda Malatipur ) এবারও আয়োজিত হল ঐতিহ্যবাহী কালি দৌড় প্রতিযোগিতা। মালতিপুর এলাকার আটটি কালী প্রতিমাকে কাঁধে নিয়ে ছুটলেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কালী দৌড় প্রতিযোগিতাকে ঘিরে তৈরি হল সম্প্রীতির এক আশ্চর্য আবহ।
কালী দৌড় প্রতিযোগিতা কী
জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে, মালদার চাঁচোলের তৎকালীন রাজা শরৎচন্দ্র রায় চৌধুরী চালু করেছিলেন এই কালী দৌড় প্রতিযোগিতা। কিন্তু কেন এই কালী দৌড়? কালী দৌড় কে ঘিরে রয়েছে এক কাহিনি। জানা যায়, সেই সময় মালদার মালতীপুর এলাকায় পুকুরের সংখ্যা ছিল একটিমাত্র । মালতিপুর কালীবাড়ি লাগোয়া পুকুরেই বিসর্জন দেওয়া হত একাধিক কালী প্রতিমা।
সে সময় চাঁচলের রাজা শরৎচন্দ্র রায় বাহাদুর সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা নিরঞ্জন করার জন্য শুরু করেছিলেন এক প্রতিযোগিতা। কালীপুজোর পরের দিন সন্ধেয় মালতিপুর বাজারে একটি কালী দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। এই প্রতিযোগিতার নিয়ম ছিল এই কালী দৌড়ে যার কালী প্রতিমা অক্ষত থাকবে, সেই প্রতিমাই প্রথম বিসর্জন দেওয়া হবে কালিদিঘিতে।
কীভাবে পালিত এই উৎসব
বর্তমানে নেই রাজা, নেই রাজত্ব। কিন্তু রাজার প্রচলিত রীতিনীতি আজও অব্যাহত মালতিপুরে। বুধবার সন্ধেয় মালতিপুরে আয়োজিত হয় ঐতিহ্যবাহী কালী দৌড় প্রতিযোগিতা। মালতিপুর এলাকার মোট আটটি কালীর দৌড় হয়েছে। এদের মধ্যে ছিল, বুড়ি কালী, চুনকা কালী, বাজারপাড়া কালী, আম কালী, হ্যান্টা কালী, হাট কালী, শ্যামা কালী। পুজো কমিটি ও এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে কালী প্রতিমাগুলিকে কাঁধে নিয়ে ছুটলেন। এই কালীদৌড় এখনও এলাকার মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে।
কালী কথা
কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথির গভীর রাতে যোগিনী পরিবৃতা হয়ে আবির্ভূতা হন মা কালী৷ জগতে কল্যাণ এবং শান্তি স্থাপনের জন্য ভক্তরা দেবীর আরাধনা করেন ৷ তিনি অসুখ বিনাশিনী ৷ মহা শক্তিধর শুম্ভ-নিশুম্ভের হাত থেকে ত্রিলোককে রক্ষা করতেই দেবীর সৃষ্টি৷ নরমুণ্ডই দেবীর অলঙ্কার৷ যুদ্ধে পরাজিত সেনাপতিদের মুণ্ডের মালা মা কালীর কণ্ঠের শোভা৷ বলা হয়, পঞ্চাশটি মুণ্ডের এই মালা আসলে জ্ঞানের প্রতীক৷ যে সেনাপতি তাঁর চুল ধরে অপমান করেছিল, তাঁর মুণ্ড দেবী হাতে ধরে থাকেন৷ মৃত সেনাপতিদের হাতের পাতা দেবী কোমরে ধারণ করেন৷ শাস্ত্রমতে এই করতলও জ্ঞানের প্রতীক৷ ভুল করে স্বামী মহাদেবের গায়ে পা তুলে ফেলায় লজ্জিতা রণে উন্মত্ত দেবী৷