করুণাময় সিংহ, চাঁচল : বিভিন্নরকম দুর্নীতিতে জড়িত বিধায়ক। দুর্নীতিগ্রস্তদের কমিটিতে জায়গা দিচ্ছেন। চাঁচলের তৃণমূল বিধায়কের (TMC MLA) বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দাবি করলেন মালদা (Malda) জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্যই। পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন বিধায়কও। তৃণমূলের এই কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসায় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
'দুর্নীতিতে জড়িত চাঁচলের বিধায়ক'। বিস্ফোরক দাবি করলেন মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূলেরই সদস্য মহম্মদ সামিউল ইসলাম। পাল্টা দলের নেতার বিরুদ্ধে আবাস যোজনায় কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বিধায়ক। যার জেরে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই জেলায় ফের সামনে এল তৃণমূলের দ্বন্দ্ব !
বিধায়ক বনাম নেতা !
'২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য মহম্মদ সামিউল ইসলাম। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সেই সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে।
দুর্নীতিতে জড়িত থাকার পাশাপাশি অবৈধভাবে ব্লক সভাপতি নির্বাচন, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তাবিত প্রার্থী তালিকায় দুর্নীতিগ্রস্তদের জায়গা দেওয়া-সহ বিধায়কের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল নেতা সামিউল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে,
দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি লিখেছেন তিনি।
মহম্মদ সামিউল ইসলাম বলছেন, "এখানে নিজের পছন্দমতো লোককে, যাকে তাকে, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদেরকে দায়িত্ব দিচ্ছেন। তাই আমি সিএম ম্যাডাম, মাননীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে চিঠি লিখতে বাধ্য হয়েছি। তিনি কন্ট্রাক্টরদের নিয়ে দল পরিচালনা করছেন। কিছুদিন আগে ব্লক প্রেসিডেন্ট হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে, কার কাছ থেকে কী নিয়েছেন, সেটা আমরা জানি। যখন প্রমাণ চাইবেন, ঠিক জায়গায় আমি প্রমাণ পৌঁছে দেব।"
এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যের বিরুদ্ধে বিধানসভা ভোটে তাঁকে হারানোর ষড়যন্ত্র, টাকার বিনিময়ে অঞ্চল কমিটি, পঞ্চায়েত সমিতিতে টিকিট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিধায়ক।
যদিও চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ বলছেন, "উনি যে অভিযোগগুলি করেছেন, সবটাই মিথ্যা অভিযোগ। বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বিজেপির কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে প্রতীকে আমি দাঁড়িয়েছিলাম, সেই প্রতীক যেন জিততে না পারে, তার জন্য নানারকম চক্রান্ত করেছেন। বিগত দিনে অঞ্চল কমিটি বলুন, বা পার্টির গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বলুন, সব ক্ষেত্রেই কিন্তু তারা, টাকার বিনিময়ে, যার বেশি যোগ্যতা নেই, তাঁকেই টাকা নিয়ে প্রার্থী করেছেন। মানুষ এবং নেতৃত্ব তাদের বাদ দিয়ে দিয়েছে, সুতরাং এতবড় ব্যবসা করতে পারছেন না বলে আমাদের উপর রাগ হচ্ছে।"
এইভাবে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে আসায় স্বাভাবিকভাবেই কটাক্ষ করার সুযোগ হাতছাড়া করেনি বিজেপি। উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত বলেন, তৃণমূলে গোষ্ঠী কোন্দল চরম আকার নিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই এদের গোষ্ঠী কোন্দল বেড়ে চলেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কে টিকিট দিতে পারবে কে কাটমানির বেশি ভাগ বাঁটোয়ারা পাবে এই নিয়ে এদের মধ্যে গন্ডগোল।
মালদা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সী অবশ্য বলছেন, এরকম বলাটা ঠিক নয়, আমারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব।
যে কোনও দিন ঘোষণা হতে পারে পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘন্ট। তার মধ্যে কি দলের এই কোন্দল সামলাতে পারবে তৃণমূল? উত্তর দেবে সময়।
আরও পড়ুন ; কাজ না করলে দলে জায়গা নেই, দলীয় কর্মীদের একাংশকে বার্তা মালদা জেলা তৃণমূল সভাপতির