করুণাময় সিংহ, হরিশ্চন্দ্রপুর (মালদা ) : সম্প্রতি মিরাটের ঘটনা দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে এক মহিলার বিরুদ্ধে। যে ঘটনায় চমকে উঠেছে গোটা দেশ। এই আবহে এবার মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। জীবিত স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করলেন স্বামী ! শুনতে অবাক লাগলেও এমনই ঘটল। কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন স্বামী ? জানলে চমকে উঠবেন আপনিও। এই ঘটনার সাক্ষী থাকল মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের পরাশটলা গ্রামের মানুষ। 


স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ৩৫-এর নিঃসন্তান মহিলা সুনীতা রায় (নাম পরিবর্তিত) দীর্ঘ ১৯ বছরের সংসার জীবন ছেড়ে গত ১৮ মার্চ প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে নতুন সংসার জীবন শুরু করেছেন। স্বামী অচিন্ত্য রায় এই ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। স্ত্রীকে চিরতরে ভুলে যেতে এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। অচিন্ত্য বাবু পেশায় রাজমিস্ত্রি। নিঃসন্তান দম্পতি। 


১৯ বছর আগে পার্শ্ববর্তী বরুই গ্রামে সুনীতার সঙ্গে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়েছিল অচিন্ত্যর। সাতপাকে বাঁধা পড়ার সময় অগ্নিকে সাক্ষী রেখে একসঙ্গে জীবন কাটানোর শপথ নিয়েছিলেন তাঁরা। একসঙ্গে ১৯টা বছর কাটানোর পর অন্যের হাত ধরে পালিয়ে যান স্ত্রী। ফেসবুকে প্রেমিকের সঙ্গে রিল বানিয়ে স্বামীকে দেখানো চেষ্টা করেন। শুধু তা-ই নয়, স্বামীর হোয়াটসঅ্যাপেও সেই রিল শেয়ার করেন। এতে স্বামীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে, পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে। তাই স্ত্রীকে 'মৃত' বলে ঘোষণা করে তাঁর আত্মার শান্তির জন্য শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করেন।


স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার হিন্দু রীতি অনুযায়ী শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করেন, গ্রামবাসীর পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগামী দিনে যাতে গ্রামে এই ধরনের আর কোনও ঘটনা না ঘটে তাই এই কাজ। পরিবারের এক সদস্য আশালতা রায় বলেন, "আমাদের বাড়ির বউ প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন। তাই আমরা তাঁর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলাম। গ্রামে যাতে আর এই ধরনের কোনও ঘটনা না ঘটে তারই বার্তা দিয়েছি। " স্বামী অচিন্ত্য বলেন, "পরিবারে কোনও অশান্তি ছিল না। তবে সন্তান না হওয়ার একটা দুঃখ ছিল। রাজমিস্ত্রির কাজ করে যা আয় করতাম সমস্তটাই স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা রাখতাম। স্ত্রী গভীর রাত থেকে ফোনে কথা বলত। আমি অনেক শাসন করেছিলাম। শ্বশুরবাড়িতে জানিয়েছিলাম। এদিন আমি কাজ করতে বাইরে গিয়েছিলাম। সন্ধেয় বাড়ি ফিরে দেখি স্ত্রী বাড়িতে নেই। সমস্ত নতুন কাপড়চোপড়, বিয়ের গয়না ও ব্যাঙ্কের ৪০ হাজার টাকা-সহ আমার জীবনের সমস্ত ইনকাম নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি। এরপর প্রেমিকের সঙ্গে ফেসবুকে রিল তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে আমাকে জানানোর চেষ্টা করে।"