অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: বাংলায় (West Bengal) ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠল বিহার পুলিশের (Bihar Police) বিরুদ্ধে। রাজ্য পুলিশকে (West Bengal Police) না জানিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২০টি বাড়ি, এমনই অভিযোগ উঠেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে। 


কী অভিযোগ? 


গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, গতকাল বিহার পুলিশ বাংলায় ঢুকে বিহার সীমানা লাগোয়া সাদলিচক গ্রাম-পঞ্চায়েতের ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। ভেঙে দেওয়া বাড়ির পিছনেই তৃণমূল নেতাদের জমি রয়েছে। সেই কারণেই বিহার পুলিশকে টাকা দিয়ে ভাঙচুর করানো হয়েছে, কটাক্ষ বিজেপি ও গ্রামবাসীদের একাংশের। বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। উল্টে বাংলার পুলিশকে না জানিয়েই বিহার পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে শাসকদল। 


রাস্তার পিছনে শাসকদলের নেতাদের জমি থাকার কারণে টাকা দিয়ে বিহার পুলিশ ভাড়া করে নিয়ে এসে ভাঙচুর চালিয়েছে শাসকদল কটাক্ষ বিজেপি সাংসদের,অন্যদিকে বিজেপিকেই কাঠগড়ায় তুলেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিযোগ বিহারের পুলিশের মার মুখে রক্ষা পায়নি আবাল বৃদ্ধবনিতা। এদিকে বিজেপির অভিযোগের তীর এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের দিকে। রাস্তার ধারের জমি পজিশন ফাঁকা করতেই নাকি বিহারের পুলিশদের আমদানি করা হয়েছিল। ভাঙচুর চালিয়ে আবার বিহারে ফিরে যায় ভিন রাজ্য থেকে আসা পুলিশের দল। ঘটনার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকা-জুড়ে। 


আরও পড়ুন, বন্ধ থাকবে ব্যান্ডেল জংশন, একাধিক লোকাল ট্রেন বাতিল করল পূর্ব রেল


তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল


এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে এলাকার এক তৃণমূল নেতা এবং ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ রাস্তার ধারে সমস্ত জমি তৃণমূল নেতাদের দখলে রয়েছে কিন্তু সেই জমির সামনে প্রায় ৭০ বছর ধরে এই পরিবার গুলি বসবাস করছিল। তাদের সরাতে এই পরিকল্পনা বলে জানা গেছে। গোটা ঘটনার অভিযোগ জানানো হয়েছে স্থানীয় কুমেদপুর ফাঁড়ি এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানাতে। গোটা ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি সুর চড়িয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বও। সমস্ত ঘটনার তদন্তে নেমেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশ। আরে গোটা ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির রাজনৈতিক চাপানউতোর।


স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার সহরাবহরা মৌজা সাদলীচক গ্রাম-পঞ্চায়েতের অন্তর্গত রাজ্য সড়কের ধারে প্রায় কুড়িটি পরিবার ৭০ বছর ধরে বসবাস করছে। এদের নিজস্ব কোন জমি-জমা নেই। তাই বাধ্য হয়ে সরকারি জমিতে রাস্তার ধারে কুড়ে ঘর বানিয়ে জীবন যাপন করছিল। এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ঝামেলা লেগে রয়েছে। ওই পরিবারগুলির অভিযোগ পুলিশের পোশাক পড়ে অনেকেই এসেছিল। সবাই হিন্দিতে কথা বলছিল। এর মধ্যে অনেকেই হাতে বন্দুক ছিল। 


সাদলিচক গ্রাম-পঞ্চায়েতের প্রধান ইন্দ্রজিৎ সরকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ওইটা বিহার পুলিশের ব্যাপার। এটাতে তার কিছু করার নেই। যদিও তৃণমূলের উর্দ্ধতন জেলা নেতা আবার ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন ওই এলাকা বাংলাতেই পড়ছে। গোটা ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। এদিন সকালে ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় যান উত্তর মালদার বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সাহায্যের আশ্বাস দেন। এরপরে বিকেল বেলা হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় এসে আইসি সঞ্জয় কুমার গাছের সঙ্গে দীর্ঘক্ষন কথা বলেন। পরে বাইরে এসে তিনি এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব ও বিহার পুলিশের উপর ক্ষোভ উগরে দেন। গোটা ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। চাঞ্চল্য গোটা হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়। যদিও গণেশ প্রমাণিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।


হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানিয়েছেন ঘটনার বিষয়ে আমাদের কিছু জানা ছিল না। গোটা ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।