করুণাময় সিংহ, মালদা: কাশ্মীরে কাজে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে জখম মালদার দুই ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরের কাছে বদগামে গুলিবিদ্ধ হন তাঁরা। এমন ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বেগে মালদায় (Malda) থাকা পরিবার। আহতদের দ্রুত মালদা ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক। আগামীকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রীর জম্মু-কাশ্মীর (Jammu Kashmir) সফরের আগে, জঙ্গিদের হামলায় গুলিবিদ্ধ মালদার দুই ব্যক্তি। সংসারের জন্য বাড়তি রোজগারের আশায়, রাজ্য ছেড়ে কাশ্মীরে পাড়ি দিয়েছিলেন ওই দুজন। সেখানেই জঙ্গি হামলার মুখে পড়েছেন তাঁরা। এমন ঘটনার পর দুশ্চিন্তায় ঘুম ছুটেছে ওই দুই জখম শ্রমিকের পরিবারের। আর কদিন পরেই ইদ। তার আগে এমন ঘটনায় প্রবল দুশ্চিন্তায় পরিবারের (Family) সদস্যরা।


পরপর জঙ্গি হামলা:
শুক্রবার উপত্যকায় পরপর হামলা চালায় জঙ্গিরা (Militants)। শুক্রবার ভোরবেলা জম্মুতে চাড্ডা ক্যাম্পের কাছে  CISF-এর বাসে হামলা চালায় জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে CISF-এর এক ASI-এর। তারপরে পুলিশি অভিযানে মৃত্যু হয় ওই জঙ্গিদের। একই দিনে শ্রীনগরে বারামুলায় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয় জঙ্গিদের। গুলি বিনিময়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জঙ্গি। শুক্রবারই রাতে শ্রীনগরেই ফের হামলা চালায় জঙ্গিরা। শ্রীনগরের কাছে বদগামে ওই ঘটনায় জঙ্গিদের গুলিতে আহত হন এই রাজ্যের দুই নাগরিক। 


জখমদের বাংলা-যোগ:
শ্রীনগরের বদগামে গুলিকাণ্ডে আহতরা হলেন নাজিবুল আলম ও আনিকুল ইসলাম। আনিকুলের বাড়ি মালদার চাঁচলের চন্দ্রপাড়ায়। নাজিবুলের বাড়ি চাঁচলেরই জালালপুরে। ভাল মজুরি মেলায় দুইজনেই আপেল গাছের পরিচর্যার কাজ করতে কাশ্মীরে পাড়ি দিয়েছিলেন। শ্রীনগরের বদগামে একই ভাড়া বাড়িতে দুজন থাকতেন।  পরিবার সূত্রে খবর, আনিকুলের মাথায় ও কাঁধে গুলি লেগেছে। গুলিতে জখম নাজিবুলও। তাঁর হাতে ও কাঁধে গুলি লেগেছে। চাঁচলের চন্দ্রপাড়ার বাড়িতে আনিকুলের দুই ছেলে, স্ত্রী ও বাবা-মা রয়েছেন। স্ত্রীর দাবি, শুক্রবার রান্না করতে করতে তাঁকে ফোন করেছিলেন স্বামী। কথা বলতে বলতেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। আনিকুল ইসলামের স্ত্রী মেরিনা বিবি বলেন, 'এক মাসে আগে কাজে গিয়েছিল। ওখানে রান্না করছিল। আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। সেই সময় গুলির আওয়াজ পাই। ফোন কেটে যায়। আমি যখন ঘুরিয়ে ফোন করি তখন হিন্দিতে কথা বলছিল কয়েকজন। পরে অন্যরা ফোন করে জানায়।' বাবা-মা, ভাইবোনের পরিবারে আরও কিছু রোজগারের আশায়  কাজের জন্য কাশ্মীর গিয়েছিল বাড়ির বড় ছেলে নাজিবুল। তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পরিবার। গুলিবিদ্ধ নাজিবুল আলমের মা রোমিশা বিবি বলেন, 'আমি নমাজ পড়ে ফিরছিলাম। সেই সময় এক আত্মীয়ের ফোন আসে। ছেলের নাম জিজ্ঞাসা করে। ছেলের নাম বলেই ফোন কেটে দেয়া ওপার থেকে। তারপর ওখানে যারা কাজ করে, তাঁদের মাধ্যমে পরে ঘটনার কথা জানতে পারি।'


প্রশাসনের আশ্বাস:
দুই পরিবারের সঙ্গে দেখা করে আহতদের দ্রুত ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন মালতীপুরের তৃণমূল (TMC) বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সী। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রের সরকার মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। কোথাও জাতপাতের নামে গণ্ডগোল। কোথাও আবার সন্ত্রাসবাদীদের গুলি খেতে হচ্ছে মানুষকে। এই সরকারের আমলে ১০০ দিনের কাজের টাকা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।' তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ মানতে চাননি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।


বাড়ির লোকেদের ঘরে ফিরে আসার অপেক্ষায় মালদার দুই পরিবার।


আরও পড়ুন: দিল্লি হিংসার তদন্তে এবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে দিল্লি পুলিশের দল