করুণাময় সিংহ, মালদা : বাড়ি তৈরির ঋণ মেটাতে, আরেকটু বেশি টাকা রোজগারের ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন তাঁরা। একটাই লক্ষ্য ছিল, সারাদিন খেটেখুটে বাড়িতে একটু বেশি করে টাকা পাঠানো। কারও ঘরে অপেক্ষায় স্ত্রী, কারও মা, কারও আবার ফুটফুটে সন্তান। কিন্তু সেই অপেক্ষা হল অনন্ত। মানুষগুলো ফিরবেন ঠিকই, কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে। ফিরছে তাদের প্রাণহীন দেহ। থমথমে মালদার গ্রামের পরিবারগুলি। একদিকে প্রিয়জন হারানোর মর্মান্তিক যন্ত্রণা, অন্যদিকে কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ। কী হবে ভবিষ্যৎ ? কেমন করে তলবে সংসার ? 


বুধবার সকালে একটা দুর্ঘটনা কেড়ে নিল এক রাজ্যের ২৪ টি প্রাণ। মিজোরামে নির্মীয়মান রেল ব্রিজ ভেঙে মৃত্যু হয়েছে বাংলার ২৪ জন শ্রমিকের। শুক্রবার মিজোরাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে আসবে দেহগুলি। তার আগে মালদায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে মালদায় গেলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।                                            


মিজোরামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃৃত্যু হয়েছে মালদার ইংরেজবাজারের একই পরিবারের চার জনের। কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে সাত্তারি নাগরপাড়া গ্রামের সরকার পরিবার। মিজোরামে সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে,ঝাল্লু সরকার (৬২), তাঁর ছেলে জয়ন্ত (২৪), নাতি সুমন (১৯), এবং জামাই রঞ্জিত সরকারের (৩৬)। ঝাল্লু সরকার ভিনরাজ্যে কাজে যাওয়ায় একটু সুখের মুখ দেখেছিল পরিবার। ঋণ নিয়ে পাকা বাড়ি তৈরি করেছিল। পরিবারের দাবি, সেই ঋণ মেটাতে আরেকটু বেশি টাকা রোজগারের জন্য়, পরিবারের বাকি তিন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে মিজোরামে কাজে গেছিলেন। বুধবার, সেখানেই সেতু ভেঙে ৪ জনেরই মৃত্যু হল।                            

অন্যদিকে, একই ছবি রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রামেও। অভাবের সংসারে ইচ্ছে ছিল ব্যাঙ্গালোরে নার্সিং পড়তে যাওয়ার। সেই জন্য, টাকার সংস্থান করতে বাবার সঙ্গে মিজোরামে কাজে গেছিল বছর উনিশের শাহিন আক্তার। কিন্তু ব্রিজ বিপর্যয়ে তছনছ হয়েছে স্বপ্ন। মৃত্যু হয়েছে শাহিনের। 


এই ঘটনায়, রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবের প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা।  রাজ্যে কাজ না থাকায় দু মুঠোর ভাতের জন্য় ভিনরাজ্যে গিয়ে বারবার প্রাণ চলে যাচ্ছে বঙ্গের সন্তানদের। এই অভিযোগে ফের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা।