কলকাতা: রাজভবন থেকে সমান্তরাল সরকার চালানোর চেষ্টা চলছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন। এবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে (CV Ananda Bose) সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সব ব্যাপারে দখলদারির আগে, রাজ্যপাল বরং নির্বাচনে নাম লেখান, জিতে আসুন বলে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। রাজ্যপালকে তাঁর এক্তিয়ারও স্মরণ করালেন মমতা।
জগদীপ ধনকড়ের পর, রাজ্যপাল বোসের সঙ্গেও টানাপোড়েন শুরু হয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে অশান্তি হোক, বা উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং সাম্প্রতিক কালে রাজভবনে কন্ট্রোল রুম খোলার সিদ্ধান্ত, রাজ্যপাল বোসের একের পর এক পদজক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে রাজ্য সরকার।
সেইউ আবহেই মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করার বিল ফেলে রাখা নিয়ে বুধবার ঝাড়গ্রাম থেকে রাজ্যপাল বোসকে নিশানা করেন মমতা। তিনি বলেন, "বিধানসভায় বিল পাস হয়েছে। আপনি ওই বিল ছেড়ে দিন! ইংরেজ আমলে যখন আইন ছিল, দেশে রাজ্যে সেই সময় মোটে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। এখন তা বেড়ে ৪৪-৪৫টি হয়েছে। উনি এগুলো ঠিক করবেন? ছাত্রছাত্রীদের ডেকে বলছেন দুর্নীতি কাকে বলে, দাঙ্গা কাকে বলে, এটা রাজ্যপালের কাজ?"
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: 'আদিবাসীদের মধ্যে বিজেপি বিভেদ সৃষ্টি করছে', ঝাড়গ্রাম থেকে তোপ মমতার
নির্বাচনী অশান্তির আবহে জেলায় জেলায় যাওয়া হোক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্মে হস্তক্ষেপ, রাজ্যপাল এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন বলে গোড়া থেকেই সরব রাজ্য। এদিন মমতার গলাতেও সেই সুর ধরা পড়ে। মমতা বলেন, "রাজ্যপালের আসন সাংবিধানিক। তাঁর কাজ সীমাবদ্ধ রয়েছে সংবিধানে। সবকিছু এভাবে করতে পারেন না উনি। গায়ের জোরে রাজ্যটাকে কিনে নেওয়া যায় না।"
এর পরই সরাসরি রাজ্যপালকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন মমতা। বলেন, "উনি বলছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী যা করছেন, আমিও তাই করছি'! আপনি তাহলে নিজের দল তৈরি করুন! নির্বাচনে জিতে আসুন! বিজেপি-র হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ান! তার পর যদি জিততে পারেন কোনও দিন...১০০ বছরেও হবে না। ততদিনে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে।"
শুধু রাজ্যপাল বা বিজেপি নয়, এদিন সিপিএম এবং কংগ্রেসকেও নিশানা করেন মমতা। জানান, লোকসভার জন্য দিল্লিতে INDIA জোট হয়েছে। কিন্তু বাংলায় 'বিজেন্ডিয়া' চলছে। তাঁর বক্তব্য, "রাম-বাম, জগাই-মাধাই-গদাই এখানে বিজেন্ডিয়া করেছে। বিজেপি-র সঙ্গে বসে আছে। লজ্জাও করে না। মানুষের একটা নীতি থাকে, সেটা মেনে চলতে হয়। এমন করতে থাকলে বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই চলতে থাকবে আমাদের। আর বিজেপি-র বিরুদ্ধে তো থাকবেই। ১০০ দিনের টাকা দেয় না, রাস্তার টাকা দেয় না, গরিব মানুষের বৃত্তি বন্ধ করে দেয়, মানুষকে ভাতে মারে, দলিত, সংখ্যালঘু, আদিবাসীদের উপর অত্যাচার চালায়।"
বিজেপি-কে আক্রমণ করতে এদিন মহার্ঘভাতার প্রসঙ্গও নেন মমতা। তাঁর মতে, নির্বাচন এলেই শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরেদের মহার্ঘভাতা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির নীতি আলাদা। কেন্দ্রের কাছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রয়েছে। আর বাংলাকে তার প্রাপ্য টাকাই দেওয়া হচ্ছে না। কিছু লোককে মহার্ঘভাতা দিয়ে হাতে রাখার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি চান সকলের হাতেই অর্থ পৌঁছক, সে হিন্দু হোক মুসলিম, কুড়মি হোক বা আদিবাসী, তফসিলি হোক বা গোর্খা, খ্রিস্টান হোক বা শিখ। বাংলার টাকা কেটে অকাজ কার যাবে না বলেও মন্তব্য করেন মমতা।