নয়াদিল্লি: সংসদে ফিরেই মণিপুর হিংসা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) তীব্র আক্রমণ কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi)। মণিপুরে তিন মাসের বেশি সময় ধরে হিংসা চললেও, প্রধানমন্ত্রী একবারও সেখানে যাওয়ার সময় পেলেন না বলে এদিন মন্তব্য করেন রাহুল। মণিকপুরকে (Manipur Violence) ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করলেন তিনি। 


বুধবার অনাস্থা প্রস্তাবের দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় বক্তৃতা করেন রাহুল। তিনি বলেন, "কিছুদিন আগে মণিপুর গিয়েছিলাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যাননি, কারণ মণিপুর ওঁর কাছে ভারত নয়। আমি মণিপুরের কথা বলছি, কিন্তু আসল সত্য হল, মণিপুর বেঁচে নেই আজ। মণিপুরকে আপনারা দ্বিভক্ত করে দিয়েছেন, ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন।" (No Confidence Motion)


জুন মাসে মণিপুর গিয়েছিলেন রাহুল। সেই মণিপুর সফর নিয়ে রাহুল বলেন, "মণিপুরের ত্রাণ শিবিরে গিয়েছিলাম। সেখানকার মহিলাদের সঙ্গে কথা বলি, কথা বলি শিশুদের সঙ্গে। এক মহিলা জানালেন, আমার একই ছেলে ছিল। চোখের সামনে তাকে গুলি করে মারা হয়েছে। সারারাত ছেলের দেহ আগলে শুয়েছিলাম আমি। তার পর ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিছু এনেছেন সঙ্গে? কিছু জামাকাপড় এবং এবং ছেলের ছবি দেখিয়ে বলেন, এইটুকুই রয়েছে।"


আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: ‘রাবণ দু’জনের কথা শুনতেন, মোদিজিও দু’জনের কথাই শোনেন’, অনাস্থা প্রস্তাবে আক্রমণাত্মক রাহুল


আরও একটি ত্রাণ শিবিরে একই ভয়াবহতার কথা জানতে পারেন বলে জানান রাহুল। রাহুল জানান, আর এক মহিলার কাছে গিয়ে কেমন আছেন জানতে চাইলে, সঙ্গে সঙ্গে কাঁপতে শুরু করেন ওই মহিলা। চোখের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান ওই মহিলা। রাহুল জানান এমন শয়ে শয়ে ঘটনা রয়েছে, তিনি শুধু দু'টি ঘটনা তুলে ধরেছেন।মোদি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে রাহুল বলেন, "মণিপুরে এঁরা ভারতকে খুন করেছেন।মণিপুর নয়, ভারতকে খুন করা হয়েছে। এঁদের রাজনীতি মণিপুরকে নয়, ভারতকে হত্যা করেছে।" 


লোকসভায় এদিন রামায়ণের প্রসঙ্গও টেনে আনেন রাহুল। বলেন, "রামায়ণে রাম রাবণকে হত্যা করেননি। অহঙ্কারই রাবণকে শেষ করে দেয়। আপনারা সর্বত্র কেরোসিন ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। মণিপুরে আগুন ধরিয়েছেন। হরিয়ানাতেও একই কাজ করছেন।" রাহুলের এই মন্তব্যে উত্তাল হয়ে ওঠে লোকসভা। বিজেপি-র তরফে দাবি তোলা হয়, রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে। কিন্তু রাহুল বলে চলেন, "ভারত একটি কণ্ঠ, ভারত আমাদের দেশের মানুষের কণ্ঠ, সেই কণ্ঠের হত্যা করেছেন আপনারা। এর অর্থ হল, মণিপুরে ভারতমাতার হত্যা করেছেন আপনারা। মণিপুরের মানুষের মানুষকে মেরে ভারতকে খুন করেছেন আপনারা। আপনারা দেশদ্রোহী, আপনারা দেশপ্রেমী নন। আপনারা দেশের হত্যা করেছেন মণিপুরে। এই কারণেই প্রধানমন্ত্রী মণিপুর যেতে পারছেন না। কারণ মণিপুরে ভারতমাতার হত্যা করেছেন। আপনারা ভারতমাতার রক্ষাকর্তা নন, ভারতমাতার খুনি আপনারা।"


এর পর স্পিকার ওম বিড়লা রাহুলকে বলেন, ভারতমাতা আমাদের কাছে মাতৃসম, তিনি যেন এমন মন্তব্য না করেন। এর পাল্টা রাহুল বলেন, "ভারতমাতা আমার মা। এক মা এখানে বসে, এক মা আমার দেশ। এই হিংসা বন্ধ না করার অর্থ, রোজ ভারতমাতাকে হত্যা করা হচ্ছে। ভারতীয় সেনা একদিনের মধ্যে শান্তি ফেরাতে পারে। কিন্তু শান্তি ফেরাতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ ভারতকে খুন করাই আপনাদের লক্ষ্য। তাই নরেন্দ্র মোদি যদি ভারতের কণ্ঠ না শোনেন, তাহলে কার কথা শোনেন? দু'জনের কথা শোনেন। দেখে নিন, আদানির জন্য মোদিজি কী কী করেছেন। রাবণও দু'জনের কথা শুনতেন, মেঘনাদ এবং কুম্ভকর্ণ, নরেন্দ্র মোদিও দু'জনের কথা শোনেন, অমিত শাহ এবং গৌতম আদানির। লঙ্কায় হনুমান অগ্নিসংযোগ করেননি, রাবণের অহঙ্কার লঙ্কাকে ছারখার করে দিয়েছিল। রাম রাবণকে হত্যা করেননি, অহঙ্কারই রাবণকে মেরে ফেলে। "