কলকাতা : ধস বিধ্বস্ত নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। কয়েক ঘণ্টা বাদে নাগরাকাটাতে দাঁড়িয়েই শান্তির বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করে নরেন্দ্র মোদি সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, এটা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন। পাল্টা সোশাল মিডিয়ায় সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখলেন, 'এটা খুবই দুর্ভাগ্যের এবং গভীর উদ্বেগের বিষয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কোনো উপযুক্ত অনুসন্ধানের জন্য অপেক্ষা না করেই – তা-ও আবার যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ ভয়াবহ বন্যা ও ধসের সঙ্গে যুঝছেন।'
মুখ্যমন্ত্রীর সফরের দিনই, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। অভিযোগ, পুলিশের সামনেই চলে গুন্ডামি, মারধর-ধাক্কা ! গাড়িতে পাথর ছোড়া ! কোনও কিছুই বাদ যায়নি। ধস বিধ্বস্ত নাগরাকাটা পরিদর্শনে গিয়ে এভাবেই আক্রান্ত হতে হয় বিজেপির প্রতিনিধি দলকে। বিজেপির প্রতিনিধি দল আক্রান্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা বাদে এই নাগরাকাটাতে দাঁড়িয়েই শান্তির বার্তা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'এমন কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে, যে ঘটনা কাম্য নয়, যে ঘটনা কারও উপর কোনও আঘাত না আসে।'
দুর্যোগে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে সোমবার, নাগরাকাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। শমীক ভট্টাচার্য বেরিয়ে যাওয়ার পরই, নাগরাকাটার সুলকাপাড়া থেকে বামনডাঙা যাওয়ার পথে বিজেপির সাংসদ-বিধায়ককে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন কয়েকজন। শঙ্কর ঘোষকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি,একের পর এক ধাক্কা দেওয়া হয়। বিজেপি সাংসদ-বিধায়ককে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় চটি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে থাকা অবস্থায় ধাক্কা দেওয়া হয় বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুকে।এরপর, বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা গাড়িতে উঠতেই, চড়াও হয় হামলাকারীরা। ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় গাড়ির কাচ। গাড়ি লক্ষ্য করে,একের পর এক পাথর ছোড়া হয়।রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে বিজেপি সাংসদকে নিয়ে যাওয়া হয় চালসার মঙ্গলবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। তারপর শিলিগুড়ির নেওটিয়া হাসপাতালে। দলীয় সাংসদ-বিধায়ক আক্রান্ত হওয়ার পর মুখ্য়মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে বিজেপি।
বিজেপি সাংসদ-বিধায়ক আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দায় করেন প্রধানমন্ত্রী । এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, 'যেভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা—যাদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।' তাঁর সংযোজন, 'আমার একান্ত কামনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস এই কঠিন পরিস্থিতিতে হিংসায় লিপ্ত না হয়ে মানুষের সাহায্যে আরও মনোযোগী হোক। আমি বিজেপি কার্যকর্তাদের আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন জনগণের পাশে থেকে চলতি উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যান।'
এর পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী সোশাল মিডিয়ায় লেখেন, 'প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর দোষারোপ করেছেন কিছুমাত্র প্রমাণ ছাড়া, আইনানুগ কোনো তদন্ত ছাড়া এবং কোনো প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়া। এটা শুধু রাজনৈতিক নিম্নতা স্পর্শ করল না, যে সাংবিধানিক নৈতিকতা তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন, সেই নৈতিকতারও লঙ্ঘন হল। যে কোনো গণতন্ত্রে আইন তার নিজস্ব পথ নেয় এবং কোনো ঘটনার দায় নির্ধারিত হয় যথাযথ প্রক্রিয়ায় - কোনো রাজনৈতিক বেদীর উচ্চতা থেকে করা একটি ট্যুইটের মাধ্যমে নয়।'
আরও খোঁচা দিয়ে তিনি লেখেন, 'যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে জাতি-হিংসা শুরু হওয়ার ৯৬৪ দিন পরে সেখানে যাওয়ার অবকাশ পেয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে বাংলার জন্য এই সহসা উদ্বেগ কোনো সমবেদনার পরিচয় নয়। বরঞ্চ, এটাকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নাট্যের মতো মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা সবাই দ্বিধাহীনভাবে হিংসার নিন্দা করি। কিন্তু এটা রাজনৈতিক বুক-চাপড়ানোর সময় নয়। এটা সহায়তা ও নিরাময়ের সময়।' প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর সংযোজন, 'প্রধানমন্ত্রীকে বলি: নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কথা শুনুন, শুধু নিজের দলের লোকের কথা শুনবেন না। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল বিজেপির নন। আপনার দায়িত্ব দেশ-নির্মাণ, কাহিনি নির্মাণ নয়।'