আশাবুল হোসেন, বিজেন্দ্র সিংহ ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বসিরহাট: নবান্ন যেতে স্কুটি চালানোর চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে আগে। জেলাসফরে এ বার লঞ্চ চালালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বুধবার হাসনাবাদের প্রত্যন্ত এলাকা লঞ্চে চেপে পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়ই লঞ্চ চালাতে দেখা যায় তাঁকে। স্টিয়ারিং হুইল হাতে ধরে ঘোরান তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে পরামর্শ দেন লঞ্চের চালক। 


বুধবার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার টাকি থেকে জলপথে সুন্দরবনের দিকে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী। একদিকে ভারতের হাসনাবাদ, অন্যদিকে বাংলাদেশ, ইছামতি দিয়ে এগিয়ে চলে লঞ্চ। তারই স্টিয়ারিং হুইলে হাত রাখেন মমতা। নদীমাতৃক সুন্দরবনে পর্যটনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে এ দিন লঞ্চ ভ্রমণে বেরোন মুখ্যমন্ত্রী। 


এর পর সফরসূচিতে না থাকলেও, বেলা ১২টা ৪০ নাগাদ হাসনাবাদের খাঁপুকুর গ্রামে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। ফেরিঘাটে নেমে, সোজা চলে যান চক খাঁপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পড়ুয়া থেকে গ্রামবাসী, মিশে গেলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। গ্রামের এক মহিলার অনুরোধে ওল-ট্যাংরা দিয়ে খান ভাত। পাশের বাড়ি থেকে আলু-পটলের তরকারি নিয়ে আসা আর এক মহিলার আবদারও মেনে নেন হাসিমুখে। 


এর আগে, মঙ্গলবার শীতবস্ত্র বিলির অনুষ্ঠানে অসন্তুষ্ট হন মমতা। অনুষ্ঠানে শীতবস্ত্রই না এসে পৌঁছনয় ক্ষুব্ধ হন। প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা করেন বিডিও এবং জেলাশাসককে। তবে একেবারে অন্য মুডে পাওয়া গেল মমতাকে। জলপথে সুন্দরবন, তার পর ক্লাসরুমে মুখ্যমন্ত্রী-কচিকাঁচাদের উপহার বিলি, গ্রামে গৃহস্থের উঠোনে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। 


খাঁপুকুর প্রগতি সঙ্ঘের মাঠে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসীদের শীতবস্ত্র তুলে দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে তখন উপচে পড়েছে ভিড়। সেখানে গ্রামের এক মহিলা বলে ওঠেন, "দক্ষিণেশ্বরের মা আমাদের এখানে চলে এসেছেন।" ঘড়িতে দুপুর ২টো বেজে গিয়েছে। আচমকা মুখ্যমন্ত্রী ঢুকে পড়েন নমিতা মণ্ডল নামে এক গ্রামবাসীর বাড়িতে। সেখানেই সারেন খাওয়া-দাওয়া।


এমনিতে বহু বছর আগেই দুপুরে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন মমতা।  কিন্তু আজ সরল গ্রামবাসীর আতিথেয়তায় না করতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী। বাড়ির উঠোনে নড়বড়ে চেয়ারে বসে শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া। ওল-ট্যাংরার ঝোল দিয়ে ভাত খান মুখ্যমন্ত্রী। খাওয়ার মাঝেই আলু-পটলের তরকারি নিয়ে ছুটে আসেন গ্রামেরই আর এক মহিলা। তাঁকেও ফেরাননি মুখ্যমন্ত্রী। 


হাসনাবাদের প্রত্যন্ত এই এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা পানীয় জলের। জানার পরই, সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, "এইখানে আমি এতদূরে এসেছি, একটাই কারণে। আমি নিজের চোখে গ্রাম দেখতে এসেছি। ২০২৪-এর মধ্যে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেব। কল ওয়াটার।ট্যাপ ওয়াটার। যতক্ষণ না হচ্ছে, আমি সাত দিনের মধ্যে এখানে জলের ব্যবস্থা করতে বলব PHE-কে বলে।" এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় বিডিও ও অতিরিক্ত জেলাশাসককে নির্দেশ দেন তিনি।  


বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে সম্প্রতি একাধিক জেলা সফরে বিভিন্ন ভুমিকায় দেখা গেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। একেবারে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে জনসংযোগ সারছেন মমতা। বুধবার টাকিতে রাত্রিবাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার ফিরবেন কলকাতায়।