কলকাতা : আরজি কর মেডিক্যালে থ্রেট কালচারের (Threat Culture) অভিযোগের তদন্ত-রিপোর্ট পেশ হয়েছে সম্প্রতি। অধ্যক্ষের কাছে রিপোর্ট পেশ করে তদন্ত কমিটি । রিপোর্টে ৩টি ক্যাটিগরিতে রাখা হয় অভিযুক্ত ৫৯ জনকে। সেই ইস্যুই এদিন বৈঠকে আসে নবান্নের বৈঠকে। 'আর জি করে একসঙ্গে ৪৭জনকে সাসপেন্ড, কেন জানানো হয়নি সরকারকে ? অভিযোগ ন্যায্য হলে ঠিক আছে, কিন্তু আমরা কারও পড়াশোনা শেষ করতে চাই না। কেন নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটা থ্রেট কালচার নয় ? এবার থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কমিটি দেখবে।' এদিন বৈঠকে এই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। থ্রেট কালচারে সাসপেনশন নিয়ে আর জি কর মেডিক্যালের অধ্যক্ষকে ধমক দেন তিনি। এই থ্রেট কালচারের পরিবেশ থেকে মুক্তি দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন। এনিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন ওয়েল বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের অনিকেত মাহাতো। যিনি আরজি মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারও। তিনি কলেজের থ্রেট কালচারের বিরুদ্ধে সরব হন।


দু'পক্ষের কথোপকথন অনেকটা এরকম...



  • অনিকেত মাহাতো : আরজি করের ছাত্র হিসাবে রাখতে চাই, আরজি করের যে ৫৯ জন বা ৫১ জনের যে কথাই বলুন না কেন ম্যাম...এর মধ্যে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, আমরা তদন্ত কমিটি তৈরি করেই...এই শাস্তির কথা...

  • মুখ্য়মন্ত্রী : সেটা তোমরা নিজেরা করতে পারো না। 

  • অনিকেত মাহাতো : আমরা করিনি ম্যাম, তদন্ত কমিটি করেছে

  • মুখ্য়মন্ত্রী : ভাই, প্রিন্সিপ্যাল আমায় জানাননি। কলেজ কাউন্সিলের কথা আমাকে বলো না । তা সম্বন্ধে আমি কিছু জানি না। কলেজ কাউন্সিল কে তৈরি করে? কী সিস্টেম ? এক সেকেন্ড দাঁড়াও অনিকেত, এক সেকেন্ড দাঁড়াও। 

  • এরপরই প্রশাসনিক নিয়ম জানার জন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, কলেজ কাউন্সিলের সিস্টেম কী ? আমাদের কি কখনো জানিয়েছে ? আমাদের জানানোটা কি কর্তব্য নয় তাঁদের ? 

  • গ্রিভান্স রিড্রেসালের তরফে এক সদস্য বলেন, "একটু ইন্টারাপ্ট করছি। গ্রিভান্স রিড্রেসাল থেকে বলছি, আমি তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলাম। আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। তারপর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কলেজ কাউন্সিলের মিটিং হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা যে ইন্টারপ্রিটেশন পেয়েছি, সেটাকে স্যার, এমএসভিপি এবং কলেজ কাউন্সিলের যাঁরা সদস্য ছিলেন তাঁরা এনএমসি গাইডলাইন মেনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।" 

  • মুখ্য়মন্ত্রী : প্লিজ, আপনারা সবকিছু দায়িত্ব মেনে নিয়ে নিজেরা এগুলো করবেন না। সরকার বলে একটা পদার্থ আছে। আপনি মানুন আর না মানুন। সিস্টেম বলে একটা জিনিস আছে। এখন থেকে সিস্টেমটা বুঝুন। আপনারা নিজেরা তদন্ত করে নিলেন...যাকে পছন্দ হল হল...যাকে হল তো হল না। 

  • সেইসময় অনিকেত বলেন, দে আর নটোরিয়াস ক্রিমিনাল ম্যাম। 

  • মুখ্য়মন্ত্রী : কী করে চান্স পেল মেডিক্যাল কলেজে ?

  • অনিকেত বলেন, পছন্দ..আপছন্দের জায়গা নয়। আমি ক্রিমিনালের পক্ষে থাকব ? না, ধর্ষকের পক্ষে থাকব ? একদম পরিষ্কার জায়গা। আপনি চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করুন। কলেজ কাউন্সিল যে শাস্তি দিয়েছে, সেটা যদি মনে হয় সঠিক নয় তাহলে আবার কলেজে নিয়ে আসুন। কিন্তু, আমি অভিযোগটা কোথায় রাখব ? আমার কলেজ ক্যাম্পাসে যদি অভিযোগ জানানোর জায়গা না থাকে ...আমি প্রশাসনে নাক গলাচ্ছি কোথায় ? আমি ছাত্র ম্যাম। 


আরজি করে থ্রেট কালচার


আর জি কর-কাণ্ডের পর রাজ্য়ের বিভিন্ন মেডিক্য়াল কলেজে থ্রেট কালচারের অভিযোগ সামনে এসেছে। এনিয়ে সরব হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়া চিকিৎসকদের একাংশ। যেখানে তরুণী চিকিৎসককে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, সেই আর জি কর মেডিক্য়ালে থ্রেট কালচারের অভিযোগে ৫৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি এই রিপোর্ট অধ্যক্ষের কাছে জমা করে। অভিযুক্ত ৫৯ জনের মধ্যে অধিকাংশই ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ ও জুনিয়র ডাক্তার। রিপোর্ট অনুয়ায়ী, ৪০ জনের বিরুদ্ধে পুরোপুরি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ অনেকাংশেই পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে আরও অনুসন্ধান করতে হবে। তবে, বাকি ৫ জনের ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রমাণ খুবই দুর্বল। এইসব পর্যবেক্ষণ তদন্ত-কমিটি রিপোর্ট আকারে অধ্যক্ষের কাছে পেশ করে। ৪০ জনের ক্ষেত্রে অভিযোগ-প্রমাণ সবকিছু নেওয়ার পর তাঁদের ক্যাটেগরি ১-এ রাখা হয়। ১৪ জনের ক্ষেত্রে আরও কিছুটা তদন্ত দরকার।