হাওড়া: পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে প্রাক্তন বিজেপি নেত্রীর অবমাননামূলক মন্তব্যে তোলপাড় গোটা দেশ। তার আঁচ পড়েছে বাংলাতেও। বৃহস্পতিবার হাওড়ায় (Howrah News) জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছে দিনভর। তাতে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। তা নিয়ে এ বার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। দিল্লির অশান্তি কেন বাংলায় টেনে আনা হচ্ছে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। একই সঙ্গে দাঙ্গা পরিস্থিতি নিয়েও সতর্কবার্তা দিয়েছেন। অবরোধকারীদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন “আমাকে খুন করলে কি আপনারা খুশি হবেন?”
নবান্ন থেকে কড়া বার্তা মমতার
এ দিন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে (Firhad Hakim) পাশে নিয়ে নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। এই অবরোধের বিরোধিতা করেন ফিরহাদও। ইসলাম শান্তির বার্তা দেয়, ঝামেলা, অশান্তি, দাঙ্গা ইসলাম সমর্থন করে না বলে মন্তব্য করেন ফিরহাদ। এর পরই মুখ খোলেন মমতা। তিনি বলেন, “ইমামরাও হাতজোড় করে অনুরোধ করছেন, আমরাও সবাই হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, অবরোধের রাজনীতি থেকে সরে আসুন। একদিনের জন্য কেউ উস্কানি জোগাবে। কাল কিন্তু কেউ পাশে থাকবে না! কাল যদি দাঙ্গা লেগে যায়, এর উত্তর যেন কাউকে দিতে না হয়!”
নূপুর শর্মার মন্তব্য নিয়ে বিগত কয়েক দিন ধরেই কাটাছেঁড়া চলছে। শুধু দেশের অন্দরেই নয়, বাইরেও নিন্দার ঝড় উঠেছে। তার জন্য নূপুরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিজেপি। যদিও এত দেরিতে পদক্ষেপ করা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। সেই নিয়ে মমতা বলেন, “বিজেপি-র বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হোক। আমাদের প্রতিবাদ করতে দিন। দলীয় ভাবে প্রতিবাদ করছি আমরা। আমাদের সাংসদরা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন।”
মমতার কথায়, “আমি সবসময় বলি, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হলে, সংখ্যাগুরুদের প্রতিবাদ করতে দিন। সংখ্যাগুরুদের উপর হামলা হলে, প্রতিবাদ করতে দিন সংখ্যালঘুদের। সারা বিশ্ব এই নিয়ে তোলপাড়। কিন্তু বাংলায় কেন গন্ডগোল করবেন? বাংলা শান্তির জায়গা। আপনার আশ্রয়স্থল। আপনারাই তো ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন আমাদের! হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান, সকলে ভোট দিয়েছেন। দিল্লির দু’টো ঘৃণ্য, বদমায়েশ দু’টো কথা বলে দেশভাগের চেষ্টা করল, তার জন্য বাংলায় অবরোধ করার দরকার নেই। বিজেপি-র রাজ্যে গিয়ে করুন না! গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লিতে গিয়ে করুন।”
আরও পড়ুন: Calcutta High court: ১১ বছর পর, বালির তৃণমূল নেতা খুনে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
এ ভাবে পথ অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষ কষ্ট পান, তাই যে কারণেই অবরোধ হোক না কেন, মানুষ ভুল বোঝেন বলেও মন্তব্য করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “কেউ কেউ নিজের স্বার্থে, প্রচার পেতে এমন করছেন। বুঝতে পারছেন না, কত মানুষ গালাগালি দিচ্ছেন। মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে দমবন্ধ হয়ে আসছে সকলের। তাঁরা কী দোষ করেছেন? কী অপরাধ তাঁদের? বিজেপি-র জন্য মানুষ কেন দুর্ভোগ পোহাবেন? আমি অনুরোধ করছি, মানুষকে রেহাই দিন। আমি রাস্তা অবরোধ, ধর্মঘট করতে দিই না। আপনারা কথার খেলাপ করেছেন। এ ভাবে আন্দোলন হয় না। মানুষ ভুল বোঝেন। আপনারা মানুষের সমর্থন চান, নাকি মানুষকে দূরে সরিয়ে দিতে চান? বিজেপি-র উপর যদি খুব রাগ থাকে, বিজেপি-কে হাতের কাছে পাচ্ছেন না, আমাকে খুন করলে কি খুশি হবেন আপনারা? আমি তৈরি আছি। দয়া করে মানুষের উপর প্রতিহিংসা নিতে যাবেন না।”
সকাল থেকে স্তব্ধ ডোমজুড়
পয়গম্বর বিতর্কে এ দিন সকাল থেকে হাওড়ার অঙ্কুরহাটিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়। টায়ার জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ। ডোমজুড় থানার পুলিশ গিয়েও অবরোধ তুলতে পারেনি। তাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় হাজার হাজার মানুষকে। তা নিয়েই এ দিন নবান্ন থেকে কড়া বার্তা দিলেন মমতা। স্থানীয় ক্লাব, পুলিশ এবং ইমামদের এলাকায় গিয়ে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যে বা যাঁরা এই ধরনের ঘটনায় উস্কানি দিচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মমতা বলেন, “আমি শান্তি, সম্প্রীতি এবং সংহতির পক্ষে। জীবন দিয়ে হলেও একতা রক্ষা করব।”