আশাবুল হোসেন, বাচ্চু দাস ও সুকান্ত মুখোপাধ্যায়: পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলা-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে গেরুয়া প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করার অমিত-বার্তা তুলে ধরেছিলেন তিনিই। বাংলায় পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটানোর সংকল্পের কথাও তাঁর মারফতই বাইরে এসেছিল। সেই হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (Himanta Biswa Sarma) সঙ্গেই এ বার দেখা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শুধু সাক্ষাৎই নয়, দু’জনের আলোচনায় উঠে এল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের (Presidential Election 2022) প্রসঙ্গও, অন্তত বিজেপি-র (BJP) তরফে তেমনই দাবি করা হচ্ছে। তাতে ফের তৃণমূল-বিজেপি গোপন আঁতাতের তত্ত্ব নিয়ে সরব সিপিএম এবং কংগ্রেস (CPM) (Congress)। বিরোধীদের প্রার্থী হিসেবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর বিরুদ্ধে যখন যশবন্ত সিন্হাকে জেতানোর প্রচেষ্টা চলছে বিরোধী শিবিরে, সেই সময় হিমন্তর সঙ্গে মমতার সাক্ষাৎ ভাল চোখে দেখছে না তারা। তৃণমূল (TMC) যদিও গোটা বিষয়টিকেই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে জানিয়েছে। তাদের দাবি, দ্রৌপদীকে সমর্থন করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
দার্জিলিংয়ে মমতা-ধনকড়-হিমন্ত সাক্ষাৎ
বুধবার সন্ধেয় দার্জিলিংয়ে হিমন্ত-মমতা সাক্ষাৎ ঘটে। উল্লেখযোগ্য ভাবে, তাতে পৌরহিত্য করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar), যা নিয়েও শুরু হয়েছে তরজা। উঠতে বসতে যাঁর সঙ্গে সংঘাত চলছে, প্রশাসনিক বিষয়ে যিনি অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন বলে দিনরাত অভিযোগ করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, ‘পদ্মপাল’ কটাক্ষে বিজেপি-র প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করছেন, তাঁর পৌরহিত্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কী প্রয়োজন পড়ল, উঠছে প্রশ্ন। ঘটনাচক্রে, বুধবার সকালেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করতে দেখা যায় ধনকড়কে। তার পরই সন্ধেয় এমন পট পরিবর্তনে হতচকিতও বোধ করছেন অনেকে। আবার মমতা-হিমন্ত সাক্ষাতের ছবিও রাজ্যপালের ট্যুইটার হ্যান্ডলেই প্রকাশ করা হয়। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচেন মমতার অবস্থান নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থেকে যায়, এমন পরিস্থিতি তৈরির প্রয়াস চলছে কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নও।
রাজ্যপালের গলায় খাদা পরিয়ে দিচ্ছেন মমতা, রাজ্যপালের সামনেই হিমন্তর সঙ্গে গভীর আলোচনা করছেন, এমন দু’টি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে রাজ্যপালের ট্যুইটার হ্যান্ডলে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত এমনিতে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। মূলত তাঁকে সামনে রেখেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর-পূর্বকে বিরোধীশূন্য করার লক্ষ্যের কথা উঠে এসেছে বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির সমাবেশেও। সেই হিমন্তের সঙ্গে মমতার সাক্ষাৎ নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ সম্প্রতি মমতাই জানিয়েছিলেন, দ্রৌপদীকে প্রার্থী করা হচ্ছে বলে বিজেপি আগে জানালে, তাঁকে সমর্থনের বিষয়টি ভেবে দেখতেন। তাই শহর থেক দূরে বিজেপি-র প্রতিনিধির সঙ্গে মমতার এই সাক্ষাৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বিজেপি-র একটি সূত্রের দাবি, প্রথমে কলকাতাতেই এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব তাতে আপত্তি তোলেন। তাতেই মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংয়ে রয়েছেন জেনে সেখানেই সাক্ষাৎ করেন হিমন্ত। সূত্রের খবর, রাজভবনে চা চক্রে যোগ দেওয়ার জন্য মমতাকে আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা রাজভবনে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনাচক্রে বুধবার সকালে বাগডোগরা পৌঁছন ধনকড়ও। তার পরই সন্ধেয় বৈঠক। তাই আচমকা কিছু ঘটেনি, সব আগে থেকে ঠিক ছিল বলে মনে করছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। যদিও হিমন্ত-সাক্ষাৎকে নেহাতই সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে উল্লেখ করেন মমতা। তাঁর কথায়, “আমাদের প্রার্থী আলাদা, ওদের প্রার্থী আলাদা। শুধুমাত্র সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল।”
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতা-হিমন্ত কথা
তবে এই সাক্ষাৎ নিয়ে মমতাকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথায়, “পিঠ পিছে ক্যায়া হোতা হ্যায়, ওহ্ দেখো। কুছ কুছ হোতা হ্যায়।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “আমি প্রথম থেকে বলছি, মোদি-মমতা জোট বেঁধে চলে। সামনে যা হয়, সবটাই লোক দেখানো। দরজা বন্ধ করে লোকসভা নিয়ে আলোচনা হবে। দিদিমণির ওপর দায়িত্ব থাকবে, বিরোধী ঐক্য ভাঙার।” পাহাড় সফর সেরে বৃহস্পতিবারই কলকাতায় ফেরার কথা মমতার। হিমন্ত-সাক্ষাৎ নিয়ে তিনি কিছু বলেন কিনা, সেদিকে তাকিয়ে সকলে।