বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: গঙ্গাপাড়ের রাজনীতির আঁচ টেমসের পাড়ে। হালআমলে তো দূরের কথা, সুদূর অতীতেও কি এমন নজির বিলেতে আছে? সন্দেহ ! লন্ডনে বক্তৃতা চলাকালীন বাংলার একাধিক ইস্যু নিয়েই বক্র প্রশ্নের মুখে পড়তে হল মুখ্যমন্ত্রীকে। আর জি কর থেকে সিঙ্গুর, ভারতের অর্থনীতি থেকে হিন্দুত্ব। নানা বিষয় উঠে এল এদিন। এমনকী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পায়ন, কোনওকিছু বাদ গেল না। নানা প্রশ্ন ছুটে এল কেলগ কলেজে বক্তৃতা দিতে যাওয়া বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। রাজ্য ছাড়ার ১৭ বছর পর লন্ডনের মাটিতে ফিরল বাংলার সিঙ্গুর প্রসঙ্গ। তাও আবার ৮ হাজার কিলোমিটার দূরে সুদূর লন্ডনে। এখানেই শেষ নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হল 'হিন্দুদের জন্য কোনও কাজ ?'

ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে হিন্দু-মুসলমান নিয়ে তপ্ত বঙ্গ রাজনীতি। ধর্ম টেনে আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ চলছে বিধানসভা চত্বরেও।  ধর্ম ইস্য়ুতে চড়ছে রাজ্য় রাজনীতির পারদ। আর তারই রেশ পড়ল টেমস-পাড়ে ! মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা শুনতে হাজির এক ব্যক্তি প্রশ্ন করে বসলেন, হিন্দুদের জন্য কোনও কাজ?  

হাল আমলে বাংলার রাজনীতির দিকে চোখ রাখলেই স্পষ্ট যে, ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটের আগে বাংলা দখলে হিন্দুত্বকেই মূল হাতিয়ার করে এগোচ্ছে বিজেপি। আর সেই প্রচারকে কটাক্ষ করে পাল্টা আক্রমণে নেমেছে তৃণমূলের আইটি সেল। ধর্মের ধ্বজা তুলে রাজনীতির পারদ তুঙ্গে। এই সময় রাজ্যের বাইরে, এমনকী দেশের বাইরে গিয়েও সেই ধর্ম নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে । বিজেপির রাজ্য়সভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। যেখানে কয়েকজনকে হিন্দুদের নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছে। এক জন প্রশ্ন করেন,  হিন্দুদের জন্য কোনও কাজ করেছেন? তখন তিনি বলেন, 'আমি সবার জন্য। আমি সবার জন্য। আমি হিন্দু, মুসলিম, শিখ, সাঁই, সকলের জন্য। আমি সবার। আমি একতার পক্ষে। '

এই ঘটনার জল গড়িয়েছে বাংলা অবধি। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'পুরো হিন্দুসমাজ, তাদের মধ্যে এই প্রশ্ন আজকে জেগেছে...মুখ্যমন্ত্রী বলছেন উনি সবার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী সবার জন্য নন, তিনি শুধু তিরিশ শতাংশের জন্য।' সোশ্য়াল মিডিয়ায় এই ভিডিও শেয়ার করে বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য লিখেছেন 'যখন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছে, তখন সারা বিশ্বের হিন্দু তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ...হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই'

পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ' বিজেপির কয়েকজন নেতা তারা এই সমগোত্রীয়। যারা কুৎসা করে, বাঙালির প্রতি অন্য়দের নিন্দা করে, অন্য়দের উৎসাহিত করে। 'সব মিলিয়ে ব্রিটেনে হিন্দু-প্রশ্নের আঁচে তপ্ত বঙ্গের রাজনীতি। 

এখানেই শেষ নয় একযুগ আগে টাটাদের ছেড়ে যাওয়া সিঙ্গুর নিয়েও মুখ্য়মন্ত্রীর দিকে প্রশ্ন উড়ে আসে লন্ডনে। পিছু ছাড়েনি যাদবপুর প্রসঙ্গও। এক শ্রোতা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন,  যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি কী করেছেন? মুখ্যমন্ত্রী জবাব দেন,'এরকম করবেন না ভাই। এরকম করবেন না।' এভাবে হুগলি নদীর তিরের একাধিক ঘটনা ঢেউ তুলল টেমসের তীরে। আর দিনের শেষে টেমস পাড়ের ঘটনায় তপ্ত হল গঙ্গাপাড়ের রাজনীতি!