কলকাতা: পুজোর ঠিক আগে শহর জুড়ছে নতুন ৩ মেট্রো লাইনে। ১ দিনে মেট্রোয় জুড়ছে ১৪ কিলোমিটার রাস্তা। আজ মেট্রোর এই তিনটি সম্প্রসারিত লাইনের উদ্বোধন করবেন নরেন্দ্র মোদি। এই দিনেই স্মৃতিরোমন্থন করে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

তিনি লিখেছেন, 'ভারতের রেলমন্ত্রী হিসেবে মেট্রোপলিটন কলকাতায় মেট্রো রেলওয়ে করিডোরের পরিকল্পনা করেছিলাম। আমার হাতেই নীল নকশা, সংস্থান করেছিলাম তহবিলের। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রজেক্ট রূপায়নে অংশ নিয়েছিলাম। এই প্রজেক্টের জন্য রাজ্যের থেকে বিনা পয়সায় জমি, রাস্তা দিয়েছি। মেট্রোর জন্য যাঁদেরকে সরানো হয়েছিল, তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি। মেট্রো পরিকাঠামো সম্প্রসারণ একটি দীর্ঘ যাত্রা ছিল। আজ আমাকে একটু স্মৃতিকাতর হতে দিন'। শুক্রবার এমনই আবেগঘন পোস্ট মুখ্যমন্ত্রীর। 

ফেসবুক পোস্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, 'এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই যে, এই শহরের বিভিন্ন প্রান্তকে (যেমন - জোকা, বেহালা, তারাতলা, গড়িয়া, নোয়াপাড়া, দক্ষিণেশ্বর, বিমানবন্দর, দমদম, সেক্টর ফাইভ, ইত্যাদি) একটি মহানাগরিক মেট্রো গ্রিড-এ সংযুক্ত করার জন্য যাবতীয় কাজ - তার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা, প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা, সময়ে কাজ শুরু করা – সব কিছুই করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। টালিগঞ্জ–গড়িয়া, দমদম–গড়িয়া, দক্ষিণেশ্বর–দমদম, সল্টলেক–হাওড়া - এই সব সংযোগেরই সূচনা আমার হাত দিয়ে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলপথের রুটও বাস্তবসম্মতভাবে পরিবর্তন করে তার রূপায়ণের পথ আমি প্রশস্ত করি। এই সব কাজের জন্য মেট্রো রেলওয়ের একটি পৃথক জোনও আমি কলকাতায় করি। সারা ভারতে ২০টি জোন ছিল, এটি অধিকন্তু নূতন হয়। ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্টেশন তৈরীর ঘোষণাও ছিল আমার। এটা আমার গর্ব, পরে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। রাজ্যের তরফ থেকে বিনামূল্যে জমি দেওয়া, রাস্তা তৈরি করে দেওয়া, বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সহ যাবতীয় বাধা-বিঘ্ন সরিয়ে যাতে দ্রুতগতিতে কাজ সম্পন্ন হতে পারে তার বন্দোবস্ত আমরাই করেছিলাম। রাজ্যের মুখ্যসচিবরা ধারাবাহিকভাবে একাধিক কোঅর্ডিনেশন মিটিং করেছেন যাতে নির্বাহী বিভিন্ন এজেন্সির মধ্যে সমন্বয় বজায় থাকে, কাজে সুবিধা হয়। এককথায়, রেলমন্ত্রী হিসেবে যে পরিকল্পনাগুলো করেছিলাম, সেগুলো ফিল্ডে যাতে সঠিকভাবে শেষ হয় তার ব্যবস্থাও আমরাই করেছিলাম- এই সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। '

আজ মেট্রোর তিনটি সম্প্রসারিত লাইনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল ৪টেয় কলকাতায় নামবে তাঁর বিমান। সেখান থেকে সড়কপথে যশোর রোড মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে তিন সম্প্রসারিত লাইনের সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর যশোর রোড স্টেশন থেকে মেট্রোয় চড়ে দমদম বিমানবন্দর স্টেশনে যাবেন। ওই মেট্রো করেই ফিরে আসবেন যশোর রোড স্টেশনে। প্রধানমন্ত্রীর পরের গন্তব্য দমদম সেন্ট্রাল জেলের মাঠ। সড়কপথে বিকেল পৌনে ৫টায় দমদমে এসে জোড়া কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তিনি। প্রথমে প্রশাসনিক সভা, যেখানে একাধিক সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। 

আজকে উদ্বোধন হওয়া মেট্রো পথে জুড়ছে দমদম বিমানবন্দর। নোয়াপাড়া থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট, যশোর রোড হয়ে সোজা পৌঁছে যাওয়া যাবে দমদম বিমানবন্দরে। মেট্রো পথে যুক্ত হবে ধর্মতলা-শিয়ালদা। ফলে, হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত যাওয়া যাবে আধ ঘণ্টায়। শিয়ালদা থেকে ধর্মতলা, পৌঁছে যাওয়া যাবে মাত্র তিন মিনিটেই। হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ রুটে ৮ মিনিট ব্যবধানে মেট্রো চলবে। শুক্রবার, সন্ধে থেকেই চালু হয়ে যাবে পরিষেবা। সকাল ৬.৩০ থেকে রাত ১০টা ১৯ পর্যন্ত এই রুটে মেট্রো চলাচল করবে। 

অন্যদিকে, এতদিন নিউ গড়িয়া থেকে রুবি পর্যন্ত মেট্রো চলছিল। সেটাই এবার চলবে বেলেঘাটা পর্যন্ত। সোমবার থেকে, নোয়াপাড়া-দমদম বিমানবন্দর এবং রুবি-বেলেঘাটা রুটে মেট্রো পরিষেবা চালু হবে। সকাল ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা মিলবে পরিষেবা। শনি এবং রবিবার এই দুই রুটে মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকবে।

এরপর মাঠের আরেক অংশে, বঙ্গ বিজেপি আয়োজিত বিজয় সংকল্প সভায় বক্তব্য রাখবেন নরেন্দ্র মোদি।