কলকাতা: নবান্নে বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে বার বার। এবার সটান জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাস্থলে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে আহ্বান জানানোর পাশাপাশি, এদিন সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলির রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি। নতুন করে কমিটি গড়ার কথা জানালেন। (Mamata Banerjee)


শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ স্বাস্থ্যভবনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাস্থলে পৌঁছন মমতা। সেখানে তাঁকে দেখে 'বিচার চাই' স্লোগান ওঠে। সেই স্লোগানে কোনও আপত্তি জানাননি মমতা। বরং আন্দোলনে সমর্থন রয়েছে বলে জানান। এর পরই বক্তৃতা করতে গিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা করেন তিনি। (Junior Doctors Protest)


ধর্নাস্থলে দাঁড়িয়ে এদিন মমতা বলেন, "আপনারা আমাদেরই ঘরের ভাইবোন। আপনারা কাজে যোগ দিন। আপনাদের প্রতি আমি কোনও অবিচার করব না। হাসপাতালের উন্নতি, পরিকাঠামো, সব কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি এবং করব। সব হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, মাল্টি সুপার হাসপাতালে যত রোগী কল্যাণ সমিতি আছে, তাতে অধ্যক্ষদের চেয়ারম্যান করব। জুনিয়র ডাক্তাররাও সদস্য হবেন, সিনিয়র ডাক্তারও থাকবেন, নার্সও থাকবেন, একজন জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ আধিকারিক থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"


মমতা আরও বলেন, "আর জি কর মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতিও ভেঙে দিলাম। বাকি সব মেডিক্যাল কলেজেরও ভেঙে দিলাম। নতুন করে তৈরি করব। আমার উপর ভরসা থাকলে, দোষীরা শাস্তি পাবেন। দোষীরা কেউ আমার শত্রু বা বন্ধু নন। আপনারা যাদের বন্ধু ভাবছেন আমার, আমি তাদের চিনি না। আমাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে আসেন তাঁরা। চূড়ান্ত হয়ে আসে আমার কাছে। মাত্র একমাস যারা এসেছে, তাদের কেউ যদি খুন, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে, সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।"


আর জি কর কাণ্ডে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এদিন সেই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, "আপনারা অনেক কাজ করেন। আপনাদের আমাদের প্রয়োজন। ভরসা রাখলে, আস্তে আস্তে আমি সব করে দেব। একদিনে সব হয় না, আমাকে একটু সময় দিন।  দুর্নীতির কোনও কিছু, কোনও টেন্ডার আজ পর্যন্ত আমার কাছে আসেনি। রোগী কল্যাণ সমিতি কী কাজ করে, আমি জানি না। আমার আওতায় পড়ে না। আপনাদের অভিযোগ থাকলে অবশ্যই পদক্ষেপ করব। বিনা কারণে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না। তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই সাজা দেব। মনে রাখবেন সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। ১৭ তারিখেও শুনানি আছে। আমি চাই না, কোনও ক্ষতি হোক আপনাদের। আমি মুখ্যমন্ত্রী নই, আপনাদের দিদি হিসেবে বলতে এসেছি।"


জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে অনুরোধ করে মমতা জানান, তিনি অনুরোধ করতে পারেন, জোর করতে পারেন না। তাঁর উপর আস্থা রাখলে, অবিচার হবে না বলে আশ্বাস জোগান। অতি সম্প্রতি নবান্ন থেকেই রোগী কল্যাণ সমিতিতে বদলের ডাক দেন মমতা। যাঁর সরাসরি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরই সমিতিতে রাখার কথা জানান।