কলকাতা: আসন বাড়িয়ে তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যে ফের ক্ষমতায় ফিরেছেন সবে। তখন থেকেই বিরোধী ঐক্যে শান দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। ২০২৪ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে থেকে, ২০২১ থেকেই পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন (Lok Sabha Elections 2024)। তার জন্য দিল্লিও ছুটে গিয়েছিলেন। তবে বিরোধী জোটের হয়ে তদ্বির করলেও, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বরং তিনি স্ট্রিট ফাইটার, লড়াই চালিয়ে যেতে চান বলেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার কি সেই অবস্থান থেকে সরবেন তিনি! বিশেষ করে যখন অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen) খোদ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদের যোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন! 


২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন মমতা!


গত ২৪ ঘণ্টায় বার বার ফিরে এসেছে এই প্রশ্ন। মমতা যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নামও লেখান, সেখানে কংগ্রেস এবং অন্য বিজেপি বিরোধী দলগুলি তাতে আদৌ সায় দেবে কিনা, তা নিয়েও উঠে আসছে নানা তত্ত্ব। রাজনৈতিক মহল থেকেও উঠে আসছে নানা মতামত। তার মধ্যেই অমর্ত্যর মন্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন মমতা। এবিপি আনন্দকে তিনি বললেন, "ওঁর (অমর্ত্য সেন) মতো অভিজ্ঞ, বিদ্বানের কথা মানে আদেশ।"


বাংলার তিন-তিন বারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তবে আঞ্চলিক স্তরের রাজনীতিক হিসেবে মোটেই নিজেকে সীমিত রাখেননি তিনি। মোট সাতবার সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি। কেন্দ্রে রেল, কয়লা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া, নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্বও যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নাম লেখানোর জন্য আলাদা করে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের দায়বদ্ধতা নেই মমতার। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তাই বিরোধী শিবিরের মমতার ভূমিকা নিয়ে ততই বাড়ছে জল্পনা। 


আরও পড়ুন: Amartya Sen: ’২৪-এ ফের মোদিই আসবেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ খালি নেই, অমর্ত্যকে জবাব বিজেপি-র


সেই আবহেই সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মমতাকে নিয়ে প্রশংসার সুর শোনা যায় অমর্ত্যর গলায়। তিনি বলেন, "এমনটা নয় যে তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এই পদের জন্য যোগ্য নন। স্পষ্টভাবেই তাঁর যোগ্যতা আছে। কিন্তু, বিজেপির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যা হতাশা, সেই সমস্ত বিষয়গুলিকে একত্রিত করে, দেশে বিভেদের রাজনীতির অবসান ঘটাতে তিনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না, এখনও তা প্রতিষ্ঠিত নয়।” তার পরই এবিপি আনন্দে প্রতিক্রিয়া জানালেন মমতা।


২০১৪ থেকে সংসদে বিজেপি-র একচেটিয়া আধিপত্য পরিলক্ষিত হলেও, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল-সহ আঞ্চলিক দলগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও মন্তব্য করেন অমর্ত্য। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি-কে সরিয়ে, অন্য কোনও দল সেই জায়গা নিতে পারবে না, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে একাধিক আঞ্চলিক দল। DMK গুরুত্বপূর্ণ দল। তৃণমূলও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজবাদী পার্টির ক্ষেত্রেও সেই কথা খাটে। তবে জানি না, এই মুহূর্তে ওই দলগুলি কী অবস্থায় রয়েছে।”


বিরোধী শিবিরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে তৃণমূলের!


পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলি যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে, তা অজানা নয় বিজেপি এবং এই মুহূর্তে কেন্দ্রে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা কংগ্রেসেরও। যে কারণে 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র চূড়ান্ত পর্বে কংগ্রেসের তরফে মমতাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ২১টি বিরোধী দলকে। তবে সেখানেও গুরুত্ব পাচ্ছেন মমতা। কারণ, বিজেপি-র বিকল্প হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চাওয়া আম আদমি পার্টি এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। কিন্তু কংগ্রেসি ঘরানার রাজনীতি থেকে উঠে আসা মমতা এবং তাঁর সাফল্যের ধারাবাহিকতাকে চাইলেও উপেক্ষা করতে পারবে না 'গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি'। তবে 'ভারত জোড়ো যাত্রা'র মাধ্যমে নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সফল হওয়া রাহুল গান্ধী নিজে সরে গিয়ে মমতাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করেন কিনা, তা সময়ই বলবে। আবার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটেই থাকবেন নাকি, কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের মতো তৃতীয় জোটোর পক্ষে ঝুঁকবেন, মমতা, তাও দেখার।