কলকাতা: দিল্লির রাজনীতিতে আঞ্চলিক দলগুলি যে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, বিষয়টি নজরে পড়েছে তাঁর। ২০২৪০-এর লোকসভা নির্বাচনে তাই আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকায় গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আর সেই প্রশ্নেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছে তাঁর মুখে। দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে যে যোগ্যতা থাকার প্রয়োজন তা মমতার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের এই মন্তব্য ঘিরেই এখন তুমুল তরজা বঙ্গ রাজনীতিতে। অমর্ত্যর মন্তব্যে নতুন করে জোর পেয়েছে তৃণমূল। বিজেপি যদিও অমর্ত্যর মন্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।


সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি মমতার প্রশংসা শোনা যায় অমর্ত্যর মুখে। তিনি বলেন, “এমনটা নয় যে তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এই পদের জন্য যোগ্য নন। স্পষ্টভাবেই তাঁর যোগ্যতা আছে। কিন্তু, বিজেপির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যা হতাশা, সেই সমস্ত বিষয়গুলিকে একত্রিত করে, দেশে বিভেদের রাজনীতির অবসান ঘটাতে তিনি নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না, এখনও তা প্রতিষ্ঠিত নয়।”


অমর্ত্যর এই মন্তব্য সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্যে। বিজেপি-র তরফে তীব্র কটাক্ষ করা হয়েছে অমর্ত্যকে। অর্থনীতিবিদ হয়ে রাজনীতি নিয়ে কেন কথা বলছেল অমর্ত্য, প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “উনি আবার এইসব ভাবছেন কেন! বোঝা যাচ্ছে বয়স হয়েছে। প্রাইমারি বিদ্যালয়ের বাচ্চাও জানে ৪২ টা আসন জিতলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়া যায় না। নোবেল পেয়েছেন, উনি জানেন না? এতকাল মোদি ভাল নয়, মোদি খারাপ, অনেক কিছু বলছিলেন। এখন লোকে বুঝিয়েছে, এসব বলা ভালো হবে না। তাই এখন এসব বলছেন। অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করুন না, এসব রাজনীতি নিয়ে কথা বলছেন কেন!”


যদিও তাঁর এই পর্যবেক্ষণকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। যে কারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে বলতে শোনা যায়, “গণতন্ত্রে যে কেউ, তাঁর নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু দেশে প্রধানমন্ত্রী পদে কর্মখালি নেই! গত ২টো টার্মে নরেন্দ্র মোদির ওপর ভরসা রেখেছেন দেশবাসী। ২০২৪-এও নিঃসন্দেহ মোদির নেতৃত্বে এনডিএ ফের জিতবে। ভ্যাকেন্সিই তো নেই।”


রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আবার সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন অমর্ত্যকে। শান্তিনিকেতনে অমর্ত্যর পৈতৃক বাড়ি ‘প্রতীচী’র বাইরেও পদ্ম ফুটিয়ে ছাড়বেন বলে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “২০২৪-এও প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি। এ রাজ্যেও বদল দেখবেন।”


তবে শুধুমাত্র মমতাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরেননি অমর্ত্য। বরং আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী দলগুলি গুরুত্বপূর্ম ভূমিকা পালন করবেন বলে মত তাঁর। অমর্ত্য জানিয়েছেন, “বিজেপি-কে সরিয়ে, অন্য কোনও দল সেই জায়গা নিতে পারবে না, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে একাধিক আঞ্চলিক দল। DMK গুরুত্বপূর্ণ দল। তৃণমূলও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজবাদী পার্টির ক্ষেত্রেও সেই কথা খাটে। তবে জানি না, এই মুহূর্তে ওই দলগুলি কী অবস্থায় রয়েছে।”


তবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে বিজেপি মমতাকে গুরুত্ব না দিলেও, অমর্ত্যর মন্তব্যে জোর পেয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “অমর্ত্য সেনের মতো একজন বিশ্ববরেণ্য মানুষের যদি এই পর্যবেক্ষণ হয়, তাহলে সেটা নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার সঙ্গে যথাযথভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে।“