কলকাতা : ১৫ অগাস্ট। সমস্ত ভারতবাসীর কাছে একটা আবেগের দিন, ভাল লাগার দিন, স্বপ্ন পূরণের দিন। স্বাধীনতার ৭৯ বর্ষপূর্তিতে উচ্ছ্বাসে ভাসছে ভারত। সেই সঙ্গে আজ স্মরণ করার দিন সেই সব বীর-বীরাঙ্গনাদের, যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। ১১৭ বছর আগে, ১৯০৮ সালের এই অগাস্ট মাসেরই ১১ তারিখ, মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেছিলেন এক তরতাজা তরুণ। দেশ হারিয়েছিল ক্ষুদিরাম বসুকে। অরবিন্দ ঘোষের অনুপ্রেরণায় বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন কিশোর ক্ষুদিরাম। সেই বীরকে আজ স্মরণ করার দিন। ১১ অগাস্ট ক্ষুদিরামের মৃত্যুদিনে ভাষা-সন্ত্রাসের অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী লিখলেন, 'একটা কথা লিখি। সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে 'সিং' বলা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের অপমান করা হচ্ছে কেন? পথিকৃৎ অমর বিপ্লবী ক্ষুদিরামকে ধরেও টানাটানি করবে ভাষা-সন্ত্রাসীরা? সম্প্রতি হিন্দি ছবি ‘কেশরী চ্যাপ্টার ২’-তে বঙ্গসন্তান ক্ষুদিরাম বসুকে নিয়ে ভুল তথ্যের দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদ জানান অনেকেই। এবার প্রতিবাদ করলেন মুখ্যমন্ত্রীও। লিখলেন,'আমাদের মেদিনীপুরের অদম্য কিশোরকে দেখানো হয়েছে পাঞ্জাবের ছেলে হিসেবে। অসহ্য!আমরা কিন্তু সবসময় দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রতীক এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। '
সাল ১৮৮৯। ৩ ডিসেম্বর । অবিভক্ত মেদিনীপুরে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষুদিরাম বসু। পড়াশোনা তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুলে। ছোট্ট ক্ষুদিরামের মনে তখন থেকেই আগুনে জেদ, সাহেব মারতে হবে। দেশের শত্রু ইংরেজদের ছাড়া যাবে না। কিশোর বয়সেই স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষা লাভ। অরবিন্দ ঘোষের অনুপ্রেরণায় বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া। অনুশীলন সমিতিতে যোগদান। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে, প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে বিহারের মুজফ্ফরপুরে পাড়ি দিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম। কিন্তু যে ঘোড়ার গাড়িতে বোমা ছুড়েছিলেন তাঁরা, তাতে মৃত্যু হয় দুই ব্রিটিশ মহিলার। তাঁরা হলেন মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা। বেঁচে যান কিংসফোর্ড। ধরা পড়ে যান ক্ষুদিরাম।
তিন মেয়ের পর চতুর্থ সন্তান ছিলেন ক্ষুদিরাম। প্রচলিত আছে, দুই ছেলের অকালে মৃত্যু হওয়ায়, ছোট ছেলের জন্মের পর অতি সাবধানী হয়ে পড়েন মা লক্ষ্মীপ্রিয়া । তিনি ছোটটির মৃত্যু ঠেকাতে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে নিজের সন্তানকে তুলে দেন দিদির হাতে। খুদের বিনিময়ে দেওয়া হয়েছিল বলে ছেলের নাম হয় ক্ষুদিরাম। সেই মাসির কাছেই মানুষ ক্ষুদিরাম।
বাংলার বীর সন্তানকে স্মরণ করে আজ মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'ক্ষুদিরাম বসুর জন্মস্মৃতি বিজড়িত মহাবনী ও সংলগ্ন অঞ্চলের আরো বেশি উন্নয়নের জন্য মহাবনী ডেভেলপমেন্ট অথরিটি করেছি। এছাড়া মহাবনীতে শহীদ ক্ষুদিরামের মূর্তি স্থাপন থেকে শুরু করে পাঠাগার সংস্কার, নতুন একটি সুবিশাল অডিটোরিয়াম, কনফারেন্স রুম - সবই করা হয়েছে। একটি মুক্তমঞ্চও করা হয়েছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের জন্য নির্মিত হয়েছে আধুনিক কটেজ, ঐতিহ্যবাহী ক্ষুদিরাম পার্কের পুনরুজ্জীবন করা হয়েছে। পুরো এলাকাটাকে আলো দিয়ে সাজানোও হয়েছে। শুধু তাঁর জন্মস্থান মেদিনীপুরেই নয়, এই মহান বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা জানাতে কলকাতায় একটি মেট্রো স্টেশনের নামও আমরা ওনার নামে রেখেছি। আমরা গর্বিত।'